নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং স্টেশন, সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি পূর্ব রেলের, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার এই রেলস্টেশনটিকে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান প্রবেশ দ্বার বলা যায়। গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং, ঝড়খালি, সন্দেশখালি, ধামাখালি-সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষের শহর ও শহরতলিতে যাতায়াতের জন্য একমাত্র না হলেও অন্যতম মাধ্যম বলা যায় ক্যানিং রেলস্টেশনকে। সুন্দরবনে আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও এই ক্যানিং রেলস্টেশনই অন্যতম ভরসা।
এই স্টেশনের ঐতিহাসিক গুরুত্বও কিছু কম নয়। ভারতের তৃতীয় রেলপথ ক্যানিং। ১৮৬২ সালে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয় শিয়ালদহ দক্ষিণ থেকে পোর্ট ক্যানিং পর্যন্ত। এই ৪৬ কিলোমিটার রেল লাইন তৈরি করে ক্যালকাটা অ্যান্ড সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে কোম্পানি।এরপর ১৮৬৬ সালে ক্যানিং প্লাটফর্মটি তৈরি হয়।
তারপর থেকে এই দীর্ঘসময় পর্যন্ত কোনো নতুন প্লাটফর্ম তৈরি হয়নি। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীসংখ্যাও কিন্তু তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বদলায়নি ক্যানিং স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটির পরিকাঠামো। এখনও প্লাটফর্মের চারিদিকে কোনো দেওয়াল ওঠেনি। প্লাটফর্মের প্রবেশ পথে নেই কোন টিকিট চেকিং ব্যবস্থা। ফলে সাধারণ মানুষের প্ল্যাটফর্মে আসা-যাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। যেকারণে নিরাপত্তার বিষয়টিও অবহেলিত। প্লাটফর্ম চত্বরেই অবাধে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে ওঠায় নিত্য যাত্রীদের চলাফেরা করতেও অসুবিধা হয়। এমনকি ক্যানিং স্টেশন সংলগ্ন রেলের জমিটির ওপরেও নিয়ন্ত্রণ নেই রেল কর্তৃপক্ষের। ফলে অবাধে চলছে অবৈধ দোকানপাট ও পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ। আসলে পুরো বিষয়টি নিয়েই নির্বিকার রেল কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে রেল পরিষেবা বন্ধ থাকায় ক্যানিং সহ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার এই রুটে সমস্ত লোকাল ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তবে পূজোর আগেই লোকাল ট্রেন পরিষেবা শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতির নিরিখে সতর্কতামূলক বা জনসচেতনতা মূলক কোনো প্রস্তুতিই চোখে পড়ছেনা প্ল্যাটফর্ম চত্বরে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডবে ক্যানিং প্লাটফর্মের ক্ষতিগ্রস্ত ছাউনিও সারানো হয়নি এখনও। আগামী দিনে করোনা পরিস্থিতিতেই লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হলে নিত্য যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা সেই ক্যানিং স্টেশনের চিত্রটা হয়তো ফের আগের মতোই চোখে পড়বে। ক্যানিং প্ল্যাটফর্ম চত্বরে আলো, শৌচালয় সহ নানান অব্যবস্থা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ নতুন কিছু নয়। সেখানে পুরোনো পরিকাঠামোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি কার্যকর করা এককথায় অসম্ভব। তাই করোনা সংক্রামণের কথা মাথায় রেখে এইকদিনের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম চত্বরকে কতটা সময়োপযোগী করে তুলতে পারে রেল কর্তৃপক্ষ সেটাই এখন বড় প্রশ্ন নিত্যযাত্রীদের কাছে।