কলকাতা: করোনা ভাইরাসের জেরে পর্যাপ্ত পরিমান পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অভাবে আমজনতাকে পড়তে হয়েছে বিপাকে। আনলক পর্বে বাস-গাড়ি ইত্যাদি চালু হলেও তার সংখ্যা খুবই কম। এদিকে রেল চলাচল শুরু না হওয়ায় বাসে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং না মেনেই ব্যপক ভিড় হচ্ছে। সেই কথা মাথায় রেখে কলকাতা দেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডি কলকাতা পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট সাইকেল লেন তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কিন্তু ‘পথচলতি মানুষের ঝুঁকি বাড়বে’ এমন যুক্তিতে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিল কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ।
নির্দিষ্ট সংখ্যাক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পরিষেবা থাকায় মানুষের অসুবিধার কথা ভেবেই গত জুন মাসে শহরের নির্ধারিত রাস্তায় সাইকেল চালানোর অনুমতি দিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রিসভা। সেই মারফত উপরিউক্ত প্রস্তাব কলকাতা পুলিশের কাছে পেশ করেছিল কেএমডি। কিন্তু শুক্রবার ট্র্যাফিক পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, বর্তমানে শহরের রাস্তার যে পরিকাঠামো তা নির্দিষ্ট সাইকেল লেন তৈরির জন্য সহায়ক নয়। তাঁর মতে, এর ফলে পথচলতি মানুষের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়বে। তাই রাস্তার উন্নতি না ঘটিয়ে এই প্রকল্প রূপায়ন কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
ওই শীর্ষকর্তা আরও জানান, বর্তমানে হরের রাস্তার বাঁ-দিক নির্ধারিত থাকে বাসের জন্য। সেক্ষেত্রে সাইকেল লেন তৈরি করতে হলে বাঁ-দিক ঘেঁষেই তৈরি করতে হবে। তার ফলে নিরাপদ যাত্রার জন্য বাসগুলিকে মাঝ রাস্তা দিয়ে চলাচল করাতে হবে। কিন্তু তখন বাসযাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। তিনি বলেন শহরের রাস্তায় বর্তমানে প্রচুর পরিমান গাড়ির সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে শহরের পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন না হলে এই সাইকেল লেন তৈরি কোনও ভাবেই সম্ভব নয়৷
বাইরের দেশে সাইকেল লেনের জন্য রাস্তার একটি দিক চিহ্নিত করা হয়। কোনও কোনও জায়গায় সাইকেল লেন আলাদা ভাবে সীমানা করা থাকে। সেক্ষেত্রে রাস্তার প্রস্থও হয় অনেকটা চওড়া। কিন্তু কলকাতার রাস্তার ক্ষেত্রে সে সুযোগ কোথায়। এমনিতেই ফুটপাথগুলিতেও সাধারণ দোকানিরা স্টল সাজিয়ে বসে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের ওই শীর্ষকর্তার কথায়, ‘শহরের ফুটপাথ দখল করে রেখেছেন হকাররা। তার জেরে মানুষকে রাস্তার বাঁ-দিক দিয়ে হাঁটতে হয়। সঙ্গে আছে গাড়ি ও বাইকের পার্কিং জোন। সাইকেল লেনের কথা তো ভুলে যান, ভালোভাবে হাঁটার জন্যই পর্যাপ্ত পরিসর নেই। সেক্ষেত্রে পথচলিত মানুষ বিপাকে পড়লেই ট্রাফিক পুলিশদেরকেই দোষ দেয়।’
বর্তমানে কলকাতা শহরের একাংশে সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেন্ট্রাল অ্যাভনিউ ও রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের মতো রাস্তায় শুধুমাত্র রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত সাইকেল চালানো যায়। কেএমডিএ’য়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাইকেল লেনের ফলে শহরের রাস্তার পরিসর ছোট হয়ে যেতে পারে, ট্রাফিকের অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে সেই কারণেই পুলিশ তাঁদের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু এর কোনও বিকল্প উপায় কেএমডি ভেবেছে কিনা, তা নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।