মধ্যরাতে স্ত্রীকে ওঝার হাতে সমর্পণ স্বামীর! জীবন দিয়ে মূল্য দিলেন গৃহবধূ

মধ্যরাতে স্ত্রীকে ওঝার হাতে সমর্পণ স্বামীর! জীবন দিয়ে মূল্য দিলেন গৃহবধূ

 

নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং: আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার পথে কীভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুসংস্কার, তার প্রমাণ আজও কিছু কম নয়৷ শনিবার আরও একবার কুসংস্কারের সাক্ষী থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার পাঠানখালি গ্রাম৷ ওঝার ঝাড়ফুঁক-তুকতাকের বলি হতে হলেন ওই গ্রামের সাপে কাটা এক গৃহবধূক৷

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোসাবার পাঠানখালি গ্রামের বাসিন্দা রুইদাস সরদার পেশায় একজন গাড়ি চালক। স্ত্রী শ্যামলী সরদার ও ৪ বছরের এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে কোন মতে তাঁদের সংসার চলে। সংসারের হাল ধরতে শ্যমলীও কাজ করতেন৷ শুক্রবার রাতে খাওয়া দাওয়া করে মশারি টাঙিয়ে ঘরের মেঝেতে বিছানা করে শুয়েছিলেন তাঁরা৷

এরপর ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে শ্যামলীর হাতের আঙ্গুলে কামড়ে দেয় বিষাক্ত সাপ৷ তাঁর স্বামী নিজের হাতেই বিষাক্ত সাপটিকে ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেন৷ কিন্তু তারপর কোনও ডাক্তার বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে স্ত্রী শ্যামলীকে গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যান রুইদাস৷ এরপর চিকিৎসার নামে শুরু হয় ওঝার ঝাঁড়ফুঁক৷ ভোরের দিকে ওই গৃহবধূর অবস্থার অবনতি হলে, তাঁকে নিয়ে আসা হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে৷ সেখানেই চিকিৎসকরা শ্যামলী সরদারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ৷  মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়৷

তবে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ কারণ এখানে সাপের উপদ্রব যেমন মারাত্মক, তেমনই ওঝা-গুণিনের উপদ্রবও কিছু কম নয়৷ সরকারের পাশাপাশি ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থাও দীর্ঘ দিন ধরে সাপের কামড়ে মৃত্যু রুখতে সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে আসছে৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও চলছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার উদ্যোগ৷ কিন্তু এরপরেও সেই কুসংস্কারের অন্ধকারেই রয়েছেন গ্রামবাসীরা৷  সাপে কামড়ালে তাই এখনও তাঁদের কাছে প্রধান ভরসা ওঝা-গুণিন৷ এখনও তাঁদের বিশ্বাস জিন, ভুত, কিংবা জল দেবতায়৷ ফলে শুধুমাত্র সাপের কামড়ে নয়, নানান রোগব্যাধীর ক্ষেত্রেও বিনা  চিকিৎসায়, ওঝা-গুণিনের ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের মত অবৈজ্ঞানিক উপাচারের শিকার হতে হয় অসহায় গ্রামবাসীদের৷

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের এবং বাসন্তী ব্লকে ৮৮ জন,ক্যানিং-১ ব্লকে ৮৩ জন ক্যানিং-২ ব্লকে ৬০ জনের মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে৷ তবে ২০১৫ সালে ক্যানিং-১ ব্লকে মোট সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ১০২৪ জন৷ এর মধ্যে বিষহীন সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ৯৪১ জনের৷ বিষধর সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ৮৩ জনের৷ আর মৃত্যু হয়ে ছিল ৬ জনের৷ এত মৃত্যুর জন্য দায়ী গ্রামবাসীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতা৷ যার কাছে আজও অসহায় গ্রামবাসী, অসহায় বিজ্ঞান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − sixteen =