লজ্জা! এ কোন বাংলা? মুসলিম, তাই কি তাড়ানো হল শিক্ষকদের? সপ্তমে প্রতিবাদ

'কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ', এমনটাই ভারতের সর্বত্র লেখা থাকত ব্রিটিশ আমলে। ব্রিটিশরা চলে গিয়েছে, ভারত স্বাধীন হয়েছে, কেটে গিয়ে ৭৩ বছর। কিন্তু বর্তমানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জেরে আবারও সেই দিন ফিরে এসেছে, যেখানে ধর্মের নামে বৈষম্য চলছে। সোমবার কলকাতার সল্টলেকের একটি ঘটনায় তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে। মালদহ থেকে আগত ১০ জন শিক্ষককে একটি গেস্ট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল, অপরাধ তাঁরা মুসলমান।

 

কলকাতা: ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’, এমনটাই ভারতের সর্বত্র লেখা থাকত ব্রিটিশ আমলে। ব্রিটিশরা চলে গিয়েছে, ভারত স্বাধীন হয়েছে৷ কেটে গিয়ে ৭৩ বছর। কিন্তু বর্তমানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জেরে আবারও সেই দিন ফিরে এসেছে৷ ধর্মের নামে বৈষম্য চলছেই। সোমবার কলকাতার সল্টলেকের একটি ঘটনায় তারই প্রতিচ্ছবি! মালদহ থেকে আগত ১০ জন শিক্ষককে একটি গেস্ট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল, অপরাধ তাঁরা মুসলমান।

 

সোমবার ভোর ৬টা নাগাদ মালদহ থেকে ১০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক বিকাশ ভবনে একটি বিশেষ কাজের জন্য কলকাতায় আসেন। আগে থেকেই বিধাননগর ডিএল ব্লকের ৩৯ নম্বর ট্রিনিটি গেস্ট হাউসে তাঁদের জন্য ঘর বুক করে রেখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সম্পাদক মইদুল ইসলাম। কথা মতো ওই শিক্ষকেরা কলকাতায় এসেই তাঁদের জন্য বুক করে রাখা ওই গেস্ট হাউসে উপস্থিত হন। নথি দেখিয়ে ঘরও দেওয়া হয় তাঁদের। সকাল বেলা কিছুক্ষণ পর শিক্ষকরা সেখান থেকে বেরিয়ে প্রাতরাশ সেরে আবার যখন গেস্ট হাউসে ফেরেন, তখনই ঘটে বিপত্তি। গেস্ট হাউসের ম্যানেজার তাঁদের ডেকে জানান, মাথায় ফেজ টুপি ও দাড়ি দেখে মুসলিম বলে মনে হচ্ছে, ওই গেস্ট হাউসে উপস্থিত স্থানীয়দের তাতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই গেস্ট হাউস ছেড়ে দিতে হবে। এরপর ১৬৪ নম্বরের আরেকটি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয় ওই শিক্ষকদের। সেখানেও ঘটে একই কাণ্ড। মুসলিম হওয়ার দরুন তাঁদের সেখানেও জায়গা মেলেনি। অপমানে, বিরক্তিতে ওই দশজন শিক্ষক বিকাশ ভবনের কাজ মিটিয়ে সোমবারই নিজের জেলায় রওনা হয়ে যান।

 

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মইদুল ইসলাম এবং ঐক্যমঞ্চের সভানেত্রী ছবি চাকী, বিধাননগর কমিশনারেটে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রসচিবকেও চিঠি লিখেছেন তাঁরা। কিন্তু এদিন রাত পর্যন্ত রাজ্য পুলিশ ওই গেস্ট হাউসের ওপর কোনও চার্জশিট পেশ করেনি৷ যদিও গোটা ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছিল পুলিশ৷ আজ ৩ জনের গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ধৃতদের আজ বিধাননগর আদালতে তোলা হবে৷ প্রশ্ন উঠছে গেস্ট হাউসের তরফে স্থানীয়দের যে অসুবিধার কথা বলা হয়েছে তা কতখানি সত্যি। কারণ, বিধাননগর এলাকায় তৃণমূলের অনুমোদন ছাড়া কোনও কাজ করা যায় না, তৃণমূলের নেতাদের অনুমোদন ছাড়া মাথায় ডালা নিয়ে সবজি বিক্রি করা যায় না, বামফ্রন্ট সেখানে কোনও পোস্টার লাগালে তা ছিঁড়ে ফেলা হয়। জানা গিয়েছে, ট্রিনিটি গেস্ট হাউসের সঙ্গে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে যোগদানকারী নেতা সব্যসাচী দত্তের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

সিপিএম পলিট ব্যুরোর নেতা মহম্মদ সেলিম এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, ‘সল্টলেক গেস্ট হাউসে যা ঘটেছে তা বর্তমান সময়ে ভারত তথা রাজ্যের ধর্মের নামে যে পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।’ ঘটনাটিকে সেলিম ‘ফ্যাসিবাদে’র সঙ্গে তুলনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, গত দশ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী রাজনীতি করছেন, যার জন্য সমস্ত ক্ষমতা বিজেপি-আরএসএস এর হাতে তুলে দিচ্ছেন! এই ঘটনার তীব্র বিরোধীতা করে মমতা সরকার এবং রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার দিকে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার বিধাননগরের রাস্তায় নামার কথা জানিয়েছে বামফ্রন্ট। শিক্ষক সংগঠনের তরফেও তীব্র প্রতিবাদ এসেছে৷ শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং তার মদতদাতাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। কিন্তু এর জন্য গোটা একটা সম্প্রদায়কে দোষী সাব্যস্ত করার যে প্রবণতা তৈরি হচ্ছে৷ তার তীব্র বিরোধিতা করছি৷ কলকাতায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের যেসব শিক্ষকদের হেনস্তা করা হল, তার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *