মালদহ: জঙ্গি আবু সুফিয়ানদের মুর্শিদাবাদের ডেরায় মালদহের কারা গিয়েছিল তার খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা৷ মালদহ ও মুর্শিদাবাদ এই দুই জেলায় নিয়মিত যাতায়াতকারী সন্দেহভাজনদের চোখে চোখে রাখছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি এনআইএ অভিযানের জেরে মুর্শিদাবাদ থেকে কেউ গঙ্গা পার হয়ে বৈষ্ণবনগর বা কালিয়াচকে আত্মগোপন করে রয়েছে কি না, তারও তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া’র কথায়, পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কারও সঙ্গে জঙ্গি যোগের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বেয়াইনি কাজের সঙ্গে জড়িতদের সন্ধান চালাচ্ছে মালদহ পুলিশ।
ধৃত আল কায়দা জঙ্গি আবু সুফিয়ান সহ অন্যান্যরা নাশকতার ছক কষার পাশাপাশি যুবকদের মগজধোলাই করত। শিক্ষিত যুবকদের দলে টানার জন্য মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছিল জঙ্গিরা। মুর্শিদাবাদ লাগোয়া মালদহের বেশ কয়েকজনের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করত আবু সুফিয়ান এবং তার দলবল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, পারলালপুর-পারদেওয়ানপুর ঘাট হয়ে দুই জেলার মধ্যে যাতায়াত করত ওই সমস্ত সন্দেহভাজনরা। অনেকে আবার জঙ্গি ডেরায় যাওয়ার জন্য ফেরিওয়ালা এবং রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের ছদ্মবেশ ধারণ করত।
জিনিসপত্র ফেরি বা অন্য কোনও কাজে বৈষ্ণবনগর থানা এলাকা থেকে নিয়মিত মুর্শিদাবাদে যাতায়াত ছিল, এমন কেউ হঠাৎ যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। এনআইএ’য়ের গোয়েন্দারও দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখছেন বলে জানা গিয়েছে। ভিন জেলার দুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রাখত বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃত আল কায়দা জঙ্গিরা। গোয়েন্দাদের দাবি আবু সুফিয়ান সহ অন্যান্যরা গ্রেফতার হতেই বাকিরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মালদহে আশ্রয় নিয়ে আছে বলেই ধরে নিচ্ছে গোয়েন্দাকর্তারা। এনআইএ’র পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও বর্তমানে মালদহের উপর কড়া নজর রেখেছে।
এক গোয়েন্দা কর্তা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘অর্থের জোগান পেতে এবং দল ভারী করার জন্য জঙ্গিরা নতুন নতুন লোকজনকে দলে টানার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত যুবকদের বেশি করে টার্গেট করা হয়। উচ্চশিক্ষিতরা চালাকচতুর হওয়ায় দ্রুত প্রশিক্ষণ পর্ব সারা যায়। পাশাপাশি শিক্ষিত যুবকদের দেখে অন্যান্যরাও সহজেই জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।’ জানা গিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা অন্য পেশায় যুক্ত ছিল, এর বাইরে তারা জঙ্গি কার্যকলাপ চালাত। ডেরায় যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই কারণেই অন্য পেশায় যুক্ত থাকত। এমনকি পরিবারের লোকজনও জানত না বাড়ির সদস্য জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত বলে। সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে তাদের চাঁদা দেয়। সেই চাঁদার টাকায় জঙ্গিদের সংসার চলে। এই ধরণের লোকজনের হদিস পেতে তৎপর মালদহ পুলিশ ও গোয়েন্দারা।