দিলীপ নাকি মুকুল, বাংলা ভোটে কার উপর আস্থা রাখল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব?

দিলীপ নাকি মুকুল, বাংলা ভোটে কার উপর আস্থা রাখল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব?

তপন মল্লিক চৌধুরী : মাত্র কয়েকদিন আগেই তাঁকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে বসানো হয়। ইঙ্গিতটা তখনইমিলেছিল। এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। সে কথা মাথায় রেখেই তাকে ওই পদমর্যাদাদেওয়া হয়েছে।

পঞ্চায়েত, লোকসভা ভোটের পর বিধানসভা ভোটেতিনিই বাংলায় গেরুয়া ব্রিগেডকে জয়ের পথ দেখাবেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেতাঁর কাঁধেই ভোটবৈতরণী পার হাওয়ার দায়িত্ব দিচ্ছে সেটাএখন স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা। ওই বৈঠকেই বিধানসভা ভোটের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, দিলীপ ঘোষ নয়, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে মুকুল রায়কে। তাঁর কাধেই নির্বাচনের যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

গত লোকসভায় এ রাজ্যে পদ্মশিবির যে ১৮টি আসন এসেছে সেই কৃতিত্বের  অনেকটাই মুকুলের প্রাপ্য। ভোটের ঠিক আগে নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খাঁ, খগেন মূর্মূ, অর্জুন সিং ও অনুপম হাজরাকে ভাঙিয়ে বিজেপিতে এনেছেন তিনি। অনুপম ছাড়া সকলেই লোকসভা ভোটে জিতেছেন।

যদিও লোকসভা ভোটের পর দিলীপ বনাম মুকুল দ্বন্দ জমে উঠেছিলবিজেপির অন্দরে। মাঝে মধ্যেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মুকুলের। তাঁরবিজেপিতে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছিল জল্পনা। এখন বোঝা গেল মুকুলকে বিজেপি গুরুত্ব দেয়। সে কারণেই তাঁকে সর্বভারতীয় সভাপতির পদে বসানো। রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা বলেন, বাংলায় ভোট হয় না, করাতে লাগে। সেই ভোট করানোর অঙ্ক খুব ভাল বোঝেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক মুকুল রায়। সে কারণেই বাংলায় পদ্ম ফোটানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধে।

প্রসঙ্গত; বিজেপি দলের নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সহ সভাপতি এবং জাতীয় সম্পাদকরা এক একটি রাজ্যের নির্বাচনের পেয়ে থাকেন। তবে কে কোন রাজ্যের দায়িত্ব পাবে তা ঠিক করেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি। মুকুল রায় বাংলার প্রতিনিধি ছিলেন তাই হিসেব মতো তাঁর হাতে সেই রাজ্যের দায়িত্ব না দেওয়ারই কথা। কিন্তু আগেই তিনি দিল্লির ভোটার ও দিল্লি থেকে বিজেপির সদস্য হয়ে গিয়েছেন। এবং বাংলা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আগেই তাঁকে বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এখন তাঁর বাংলার দায়িত্ব নিয়ে সেই প্রশ্ন আর নেই।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের থেকে রাজনীতিক হিসেবে মুকুল রায় অনেক বেশি কৌশলী এবং অভিজ্ঞ। এক সময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা ছিলেন মুকুল রায়। মুকুল রায় বাংলার খুঁটিনাটি দিলীপ ঘোষের থেকে যেমন অনেক ভালো জানেন, তেমনি কি করে বাংলায় ভোট করাতে হয় সে ব্যাপারে তিনি দিলীপের থেকে অনেক বেশি অভিজন।বাংলায় যে দলে মুকুলের থেকে বড় রাজনীতিক নেই সেটা খুব ভালো করেই জানে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণে দিলীপ ঘোষ বা অন্যান্য বিজেপি নেতাদের থেকে ভোট যুদ্ধে জিততে মুকুল রায়ের হাতেই ব্যাটন তুলে দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার দিলিতে সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাংলায় ২০২১ নির্বাচনে বিজেপির ভোট-ব্যাটন ‘চাণক্য’ মুকুল রায়ের হাতে!

বোঝা গেল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এটা বিশ্বাস করেন যে মুকুল রায়ের একার কাধে ভর দিয়েই পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে লাভের মুখ দেখেছিল। যদিও এর পরেও বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে মুকুল-দিলীপ দ্বন্দ্ব একতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। দলে মুকুল বহুদিন কোণঠাসা ছিলেন। তিনি নিজেও ভাল করেই বুঝতেন বিজেপি তাকে গুরুতব দিচ্ছে না। তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে না। রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ চারপাশে বেলাগাম কথা বলে হাততালি কুড়োচ্ছেন। তাতে আখেরে দলের কতটা কি লাভ হচ্ছে।

অবশেষে জেপি নাড্ডার আহ্বানে বিশেষ বৈঠক সম্পন্ন হল দিল্লিতে। যেখান অমিত শাহ থেকে কৈালাস বিজয়বর্গীয়রা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই দিলীপকে টপকে গেলেন মুকুল! যাবতীয় জল্পনার অর্ধেক অবসান আগেই হয়ে গিয়েছিল বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিজেপি হাইকমান্ড ভোটের রথের রশি মুকুলের হাতে তুলে দেওয়াতে স্পষ্ট হল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুকুলের ওপরই আস্থা রাখলেন। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। সেটাও দুর্গাপুজোর আগেই ঘটবে। কিছুদিন পর অমিত শাহ নিজে কলকাতায় এসে সেই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন বলে খবর। ফের একবার মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কাছে যে দিলীপ ঘোষ হেরে গেলেন সেটা মানতেই হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 4 =