নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং: শরৎকাল পড়তেই আপামর বাঙালী মেতে ওঠে শারদ উৎসব দুর্গা পুজোয়। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ, মেঘেদের আনাগোনা। প্রতিবারের মত এবারও দেবী পুজোয় মাতোয়ারা হবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং শহরের দিঘিরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নম্বর দিঘিরপাড় গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা। তবে তাঁদের দেবী প্রতিমা চিরাচরিত মূর্তির চেয়ে ব্যতিক্রমী এবং বিরল। অন্যান্য দুর্গা প্রতিমার মত নয়, এই ভট্টাচার্য বাড়ীর শতাব্দী প্রাচীন দুর্গামূর্তির মুখের রঙ কালো। স্বাভাবিক ভাবেই এই কালো মুখের দুর্গা প্রতিমাকেই বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য পরিবারের বংশধররা।
ভট্টাচার্য পরিবার এক সময় বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে বসবাস করতেন। প্রায় ৪৩৫ বছর আগে ১৫৮৫ সালে বংশের কালীপ্রসন্ন, কাশীকান্ত, রামকান্ত, রামরাজা ভট্টাচার্যরা মিলিতভাবেই সেখানে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তৎকালীন সময়ে জাঁকজমক ভাবে দুর্গাপুজো করা হত। ১৯৩৮ সালে ক্যানিং শহরে ভট্টাচার্য্য পরিবার চলে আসে। ক্যানিংয়ে চলে এলেও পুজোর সময় ক্যানিং থেকে সপরিবারে বাংলাদেশের বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে গিয়ে পুজো করে আসতেন ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা।
এই ক্যানিং এলাকায় সর্বপ্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য ইন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য। প্রতিমার রঙ কালো হয় কেন সেই প্রসঙ্গে বর্তমান পরিবারের সদস্য পীযুষকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগের ঘটনা। সে দিন ছিল মহাসপ্তমী। পুজো হচ্ছিল বাংলাদেশেই। পাশের একটি মনসা মন্দিরের জলন্ত প্রদীপের শিখা থেকে কোন প্রকারে একটি কাক জ্বলন্ত প্রদীপের সলতে নিয়ে মন্ডপের উপর বসে মন্ডপে ফেলে। আগুন লেগে যায় শন দিয়ে তৈরি দুর্গামণ্ডপের চালা ঘরে। মুহূর্তের মধ্যে সেই বিধ্বংসী আগুন গ্রাস করে নেয় পুজোমণ্ডপকে। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পায়নি স্বয়ং দেবী দুর্গাপ্রতিমার মুর্তিও। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় দারুণ ভাবে ভেঙে পড়ে সমগ্র ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা। এলাকার মানুষ বলেন ওই পরিবার ওপর দেবী রুষ্ট হওয়ায় এই ঘটনা।
বলা হয়ে থাকে, এই কথা শোনার পর ভট্ট্যাচার্য পরিবারের এক সদস্য দুর্গা প্রতিমার পোড়া মূর্তির সামনে ধ্যানে বসে জানতে পারেন পুজো হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়ে যেমন মুখ কালো, শরীর বাদামী রং হয়েছে ঠিক তেমন ভাবে দুর্গা প্রতিমার মূর্তি গড়ে পুজো করা যাবে। আর তা না হলে ভট্টাচার্য বংশের ক্ষতি হবে। সেই থেকেই প্রতিমার মুখ কালো এবং শরীর বাদামী রঙের হয়ে আসছে।
পুজোর শুরুতেই মহিষ বলির প্রচলন ছিল। কিন্তু মহিষ বলি দেওয়ার জন্য সেসময় কেউ মায়ের প্রসাদ খেতেন না। ফলে পরবর্তী কালে পাঁঠা বলি দেওয়া শুরু হয়। তবে সেই বলি ও মায়ের স্বপ্নাদেশে বন্ধ হয়। জোর করে বলি দেওয়ার চেষ্টা হলে তা বিফল হয়েছে। সেই থেকেই বলি দেওয়ার প্রথা একপ্রকার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মায়ের আদেশ অনুযায়ী সপ্তমী, অষ্টমী ও সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো বলি এবং নবমীতে চালকুমড়ো, শশা ও শত্রু বলি দেওয়ার প্রচলন শুরু হয় সেই থেকেই।