তপন মল্লিক চৌধুরী : বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো এই মুহূর্তে ঘরের চৌকাঠে৷ এখন পুরোদমে চলেছে পুজোর বাজার৷ প্রতিদিন শহর ও আশপাশের বাজার এলাকার রাস্তাঘাটে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভিড়৷ আশঙ্কা এই সুযোগে কি করোনা ভাইরাস নতুন করে থাবা বসাবে? চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতো, এক জায়গায় প্রচুর মানুষ ভিড় করলে নাকি করোনা ভাইরাসের সুবিধা হয়! ভাইরাস সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে৷ মানুষ সেই ভুলে পা রাখলে ভাইরাস সেই সুযোগ নিতে পারে৷
শুধু দুর্গা পুজো নয়, কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে উৎসবের মরসুম৷ দুর্গাপুজো ছাড়াও নবরাত্রি, দীপাবলি, ছট, তার কিছুদিন পরে বড়দিন- একটানা উৎসবের দিন মানেই জনসমাগম। যা ঘিরে ইতিমধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষ তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা হয়ত করছেন না, কিন্তু তলে তলে এক ধরণের আশঙ্কা মানুষের মনে রয়েছে৷ কারণ, উৎসবের মাসে ভিড় বা জনসমাগম নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা৷ এই সময় করোনা ভাইরাসের দাপট খুব বাড়বে, এ কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনও সাধারণ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎসব পালনের নির্দেশ কোনও ধর্ম বা ইশ্বর দেননি৷
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে; যেখানে গত মাসে প্রতি দিন ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ দেশে করোনা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, সেখানে চলতি মাসে দিন প্রতি আক্রান্তের সংখ্যাটা যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু এই লক্ষ্যনীয় হারে আক্রান্তের সংখ্যা কমা নিয়ে সংশয় বেড়েছে ঠিক উৎসবের আগে। বিশেষজ্ঞদের সংশয়; এই ধারা কি উৎসবের পরে বজায় থাকবে। তার উপরে উৎসবের মরশুমের মাঝখান থেকেই শীতকালও এসে পড়বে।
সম্প্রতি এই আশঙ্কার কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন এইমস-এর ডিরেক্টর ডা. রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেন, ‘এখন সংক্রমণ প্রবণতা যে কমের দিকে তা নিয়ে আমরা আশাবাদী। তবে করোনা নিয়ে আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷’ তিনি এও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে দু’টি বিষয়ের ওপর ভর করে। যার মধ্যে একটি হল উৎসবের মরশুম। এই সময় মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক জায়গায় জড়ো হবেন। যে কারণে সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল শীতকাল। ভাইরাসের সক্রিয়তা এই সময়ে অনেকটাই বেড়ে যায়৷’ ডা. রণদীপ গুলেরিয়ার বক্তব্যের প্রমান আমরা পেয়েছি কেরলে। সেখানে ওনামের পর প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একই হাল হয়েছিল মহারাষ্ট্রেও। গণেশ চতুর্থীর পর সেখানে সংক্রমণ প্রবলভাবে ছড়িয়ে ছিল। তবে কি বাংলাতেও পুজোর পরে একই পরিস্থিতি ঘটতে পারে?
গত কয়েকদিন ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যের কয়েকটি বড় শহরের বাজার এলাকায় মানুষকে যেভাবে কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে, তারা যেভাবে রাস্তায় চলাফেরা করছে, তাতে পুজোর দিনগুলিতে যে কী হতে চলেছে, তা আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে। করোনাকালেও অন্যান্য বছরের মতোই মানুষ ভীড় জমাবে। সামাজিক দূরত্বের কোনও নিষেধ থাকবে না। যদিও এখনও নেই। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত যে মানুষ এক ভয়াবহ অবস্থা পার করেছে, তা বোঝার উপায় নেই। কোথাও করোনা নিয়ে মানুষের ভয় নজরে পড়ছে না। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, করোনা পুজোর পরে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
এদিকে এবার তৃতীয়া থেকে প্যান্ডেলে ঘুরে; রাত জেগে ঠাকুর দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মানে উৎসবের মরসুম শুরু হচ্ছে ওই দিন থেকে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে দুর্গা পুজোর রূপরেখা তৈরি করেন। এরপরই তিনি তৃতীয়া থেকে একাদশী পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা যাবে বলে ঘোষণা করেন। অথচ পার্শব্বর্তী রাজ্য ওড়িশায় এবং অসমে করোনা সংক্রমণ যাতে আর না বাড়ে তার কারণে; মূর্তি গড়ে দুর্গা পুজো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রমণ প্রতিরোধে উৎসবে উচ্ছ্বাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা ঢালাও ভাবে পালনের নির্দেশ দিলেন।