কলকাতা: এদিকে করোনা, অন্যদিকে বাজারে দেদার কালোবাজারি৷ জোড়া ফলায় জেরবার সাধারণ জনতা৷ করোনা কালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সস্তার ডিমের উপর নির্ভর করে আসছিলেন সাধারণ জনতা৷ বাজারে আচমকা চাহিদা বাড়তেই সুযোগ বুঝে মাঠে নেমে পড়েছেন এক শ্রেণির ডিম বিক্রেতা৷ করোনা ও উৎসবের আবহে খুচরো বাজারে এখন অনেক সাড়ে ছয় থেকে সাত টাকা দামে প্রতি পিস পোলট্রির ডিম বিক্রি হচ্ছে৷ বাজারে ডিমের দাম বাড়লেও সরকারের স্টলে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৪ টাকায়৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন দামের এতটা পার্থক্য? নানান যুক্তি ব্যবসায়ীদের৷
বেসরকারি পোলট্রি মালিকদের সংগঠনের দাবি, কম দামে ডিম বিক্রি করা সম্ভব নয়৷ উৎপাদন খরচ পাঁচ টাকার বেশি বলে দাবি পোলট্রি মালিকদের৷ ফলে, সাড়ে পাঁচ টাকায় ডিম বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের কথা শুনিছেন তাঁরা৷ রাজ্যে দৈনিক ডিমের চাহিদা৩ কোটির কাছাকাছি৷ আড়াই কোটি রাজ্যে উৎপাদন হয়৷ বাকিটা আসে ভিন রাজ্যব থেকে৷ কিন্তু, রাজ্যে এখন অধিকাংশ উৎপাদন হলেও কেন বাড়ছে দাম? কলকাতা ও শহরতলির ডিমের দাম বাড়লেও নিরুত্তাপ প্রশাসন৷
বাজারে লাফিয়ে দাম বাড়লেও প্রাণী সম্পদ দফতরের অধীনস্থ লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ডিম উৎপাদনের দাম কিন্তু সে অর্থে বাড়েনি৷ নদীয়ার কল্যাণীর কাছে একটি অত্যাধুনিক পোলট্রি তৈরির কাজ চলছে৷ এখান সেখানে প্রায় এক লক্ষ মুরগি আছে৷ দৈনিক উৎপাদন ৯০ লক্ষ ডিম৷ উৎপাদিত ওই ডিম হরিণঘাটার বিভিন্ন স্টলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে৷ রাজ্যে এমন প্রায় ২৫০টির বেশি স্টল রয়েছে৷ বাজারে ডিমের দাম বাড়লেও সরকারের স্টলে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৪ টাকায়৷ কিন্তু, সরকারি ভাবে উৎপাদিত ডিমের দাম যদি ৪ টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে কেন বেসরকারি পোলট্রির ডিমের দাম ৭ টাকার কাছাকাছি? মাঝে অতিরিক্ত টাকা যাচ্ছে কোথায়?
বেসরকারি পোলট্রি মালিকদের দাবি, সরকারি পোলট্রিতে উৎপাদন খরচে ডিম বিক্রি যাচ্ছে না৷ কেননা, সেখানে সরকারি খরচে পোলট্রি তৈরি হয়৷ উৎপাদন খরচও কম৷ বেসরকারি ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়৷ জমি কেনার দাম প্রচুর৷ ঋণের টাকা সুদ ও লাভের অঙ্ক মিলিয়ে দাম বাড়ছে৷
যদিও এর আগে বিরোধীশূন্য সংসদের অধিবেশনের বিল পাস করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র৷ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিলের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধনী) আইন’ পাস করিয়ে আইনেও তা পরিণত হয়েছে৷ নয়া আইনে এখন থেকে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজের মতো পণ্য আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় থাকছে না৷ ফলে এই পণ্যগুলির উৎপাদন, মজুতদারি, রফতনি ও বিক্রি এবং কোনও ক্ষেত্রে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকছে না৷ নয়া এই আইন কার্যকর হতেই না হতেই আলু, পেঁয়াজ, দামে চোখে জল আসছে সাধারণ জনতার৷ এবার সাধারণ জনতার পকেটে চাপ বাড়িয়ে রাতারাতি মহার্ঘ ডিম৷
করোনা মহামারীর হাত ধরে আয় কমেছে সাধারণ জনতার৷ তার উপর লাফিয়ে বাড়েছে আলু, পেঁয়াজের দাম৷ সরকারি হুঁশিয়ারি এখনও কান ঢোকেনি ব্যবসায়ীদের৷ মহামারীর সুযোগে অগ্নিমূল্য বাজারের দোসর ডিম৷ করোনা আবহে মাংস-ভাত কিংবা মাছ-ভাত জোটানো এখন চাপের৷ কিন্তু, মহার্ঘ মাছ-মাংস নাই বা হল! দুধের দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে পারে ডিম-ভাত! সস্তায় প্রোটিন পেতে সাধারণ জনতার ভরসা ডিম৷ করোনাকালে যা খুবই প্রয়োজন৷ কিন্তু, তাতে কি? বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় সাধারণ জনতা কী খাবে, কী কিনবে বা আদৌ কিনতে পারবে কি না, তা দেখা তো আর সরকারের কাজ নয়, দায় এড়াতে আইনও হয়েছে৷ সরকার যখন দায় এড়িয়ে গিয়েছে, তখন বাজার তো চড়বেই! এবার সেই আশঙ্কায় বাস্তাবের মাটিতে হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ জনতা৷ আলু, পেঁজায়, মাছ-মাংস, সব্জির পর এবার মহার্ঘের তালিকায় জুড়ল ডিমও৷করোনা ঠেকাতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বলছেন চিকিৎসকরা৷ সস্তায় প্রোটিন পেতে সাধারণ জনতার ভরসা ছিল ডিম৷ করোনায় ডিম চাহিদাও ছিল বেশি৷ জনতা বেশ বেশি ডিম কিনছে, বিষয়টি বুঝতে খুব একটা দেরি করেননি ব্যবসায়ীদের একাংশ৷ মহামারীর সুযোগে এবার সেই ডিমকেও মহার্ঘ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে রাতারাতি৷