পুজো উদ্বোধনে বাঙালির মন ছুঁয়ে বাংলায় ভাষণ নমোর, দিলেন সোনার বাংলা গড়ার ডাক

পুজো উদ্বোধনে বাঙালির মন ছুঁয়ে বাংলায় ভাষণ নমোর, দিলেন সোনার বাংলা গড়ার ডাক

8ab602ef2e28a3d22cd0191f39903141

নয়াদিল্লি: মহাষষ্ঠীতে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলকে অবাক করেই ঝরঝরে বাংলায় সকলকে অভিনন্দন জানালেন তিনি৷ এদিন বক্তব্যের শুরুতেই নমো বলেন, ‘‘ প্রথমেই আপনাদের সকলকে জানাই শ্রী শ্রী দুর্গা পুজো, কালী পুজো এবং দীপাবলীর প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ বাংলার এই পবিত্র ভূমিতে দুর্গা পুজোর সময় আপানাদের সকলের মধ্যে আসতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি৷ ভক্তির টানে আজ আমার মনে হচ্ছে আমি দিল্লিতে নই, বাংলাতেই রয়েছি৷’’

আরও পড়ুন- বন্যাবিধ্বস্ত তেলেঙ্গানার পাশে মমতা, ২ কোটি টাকা দান করলেন ত্রাণ তহবিলে

এর পরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্গা পুজোর সময় সারা দেশ বাংলাময় হয়ে ওঠে৷ গ্রাম বাংলা হোক বা শহর বাংলা, এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে মা দুর্গার নবরূপের ঝলক দেখা যায় না৷ দুর্গা পুজো ভারতের একতার পুজো৷ ভারতের পূর্ণতার প্রতীক৷’’ এদিন বাংলার মহাপুরুষদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান নমো৷ তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া মহান ব্যক্তিত্বরা যখন যেমন প্রয়োজন হয়েছে অস্ত্র এবং শাস্ত্র দিয়ে, ত্যাগ ও তপস্যার দিয়ে ভারত মাতার সেবা করেছে৷ সমগ্র মানবতাকে দিশা দেখিয়েছে৷ রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রী অরবিন্দ, বাবা লোকনাথ, শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, মা আন্দময়ীর মতো অসংখ্য মনিষীর নাম স্মরণ করেন তিনি৷  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও প্রণাম জানান৷ যাঁরা সমগ্র ভারতবাসীর মনে নতুন চেতনা জাগ্রত করে তুলেছিলেন৷ নাম নেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়ের৷ তিনি বলেন, এই সকল মহাপুরুষের নাম নিলেই এক নতুন চেতনা জাগ্রত হয়৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন ভাবে জাগ্রত করা নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোস, শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ক্ষুদিরাম বোস, প্রফুল্ল চাকি, মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘা যতীনকেও এদিন শ্রদ্ধা জানান মোদী৷ বিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সিনেমা জগতে, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেনের মতো শিল্পীদের অবদানও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত মাতার যে ছবি আমাদের মনে প্রতিষ্ঠিতস সেই ছবিটি এঁকেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর কথায়, বাংলার লোকেরা চিরকাল দেশকে উন্নতির পথ দেখিয়েছে। আমার আশা আগামী দিনেও বাঙালিরা ভারতের গৌরবকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

আরও পড়ুন- বিজেপি-জেডিইউ জোট শচীন-শেহবাগ ওপেনিং জুটির মতো সুপারহিট: রাজনাথ

নমো বলেন, এই বছর করোনা সঙ্কটের মধ্যেই দুর্গাপুজো পালন করছি৷ মা দুর্গার ভক্ত থেকে পুজোর উদ্যোক্তারা সকলে অদ্ভূত সংযম দেখিয়েছে৷ লোক প্রবেশ কমেছে, আয়োজনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু উৎসবের রং, আনন্দ অপরিসীম৷ বাংলার উৎসাহের কোনও অভাব নেই। এটাই তো বাংলা। এটাই বাংলার পরিচয়। তবে সকলের কাছে তাঁর নিবেদন, পুজোর সঙ্গে সঙ্গে দু’ গজ দূরত্ব বিধি মেনে চলুন৷ মাস্ক পড়ুন৷ নিয়ম পালন করুন৷ 

তিনি বলেন, এখানে মা দুর্গাকে মেয়ে মনে করা হয়৷ মেয়ের মতো তাঁকে স্বাগত জানানো হয়৷ মা দুর্গা দুঃখ, দারিদ্র, দুর্গতি দূর করেন। সেজন্য কোনও গরিবের দুর্গতি দূর না করলে দুর্গাপূজো সম্পূর্ণ হয় না।” তিনি বলেন, দেশে মহিলাদের শক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ২২ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।  মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহ থেকে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। ‘বেটি বাচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পে জোর দেওয়া হয়েছে। এদিন আত্মনির্ভর ভারতের পাশাপাশি সোনার বাংলা গড়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বাংলার মানুষের সুবিধার জন্য কেন্দ্র কাজ করছে বলেও এ দিন উল্লেখ করেন নমো৷ প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাংলায় কী কী কাজ হয়েছে, সেই পরিসংখ্যানও এ দিন দিয়েছেন মোদী। শান্তি, প্রেমের ভাবনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি৷ বলেছেন হিংসাকে অহিংসা দিয়ে জয় করার কথা৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *