বিমল গুরুং কে? কী তাঁর পরিচয়? কতটা জোরালো গোর্খাল্যান্ডে দাবি?

কিছু বছর নিখোঁজ থাকার পর হঠাত্ কলকাতায় পদার্পণ, এবার পাহাড়ে ফেরার প্রস্তুতি৷ সম্প্রতি খবরের শিরোনামে প্রায়ই উঠে আসছে বিমল গুরুংয়ের নাম৷ ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সোচ্চার হয়ে এবার বিজেপির হাত ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরতে চান গুরুং৷ কিন্তু কে এই বিমল গুরুং? কীই বা তাঁর এই গোর্খাল্যান্ডে দাবি?

কলকাতা: দীর্ঘ ৩ বছর নিখোঁজ থাকার পর হঠাৎ কলকাতায় পদার্পণ৷ এবার পাহাড়ে ফেরার প্রস্তুতি৷ সম্প্রতি খবরের শিরোনামে প্রায়ই উঠে আসছে বিমল গুরুংয়ের নাম৷ ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সোচ্চার হয়ে এবার বিজেপির হাত ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরতে চান গুরুং৷ কিন্তু কে এই বিমল গুরুং? কী তাঁর পরিচয়? কীই বা তাঁর এই গোর্খাল্যান্ডে দাবি? 

বিমল গুরুং৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ একদা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা GTA -এর চেয়ারপার্সন ছিলেন তিনি৷ পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবি করেছিল জেজিএম৷ ২০১৭ থেকে নিখোঁজ ছিলেন বিমল গুরুং৷ ২০১৭ সালে গোর্খাল্যান্ডের ইস্যুতে পাহাড়ে শুরু হয় অশান্তি৷ পৃথক রাজ্যে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ১০৪ দিন ব্যাপি ধর্মঘটের ডাক দেয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ অশান্তি তীব্র আকার ধারণ করে৷ গুরুংকে খুঁজতে গিয়ে গুরুং বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান রাজ্য পুলিশের আধিকারিক অমিতাভ মালিক৷ এরপর থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় গুরুং৷ সেই সুযোগেই জেজিএম প্রধানের পদে বসেন বিনয় তামাং৷ জিটিএ-র চেয়ারপার্সনও করা হয় বিনয় তামাংকে৷ 

কিন্তু কী এই গোর্খাল্যান্ড ইস্যু? গোর্খাল্যান্ডের এই দাবি চলে আসছে বহু বছর ধরে৷ গোটা দার্জিলিং এবং ডুয়ার্সের বেশ কিছু অংশ নিয়ে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবি করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ প্রস্তাবিত রাজ্যের মোট আয়তন ৬৪৫০ বর্গকিলোমিটার৷ কিন্তু এত ছোট অঞ্চল নিয়ে কি আলাদা রাজ্য তৈরি করা আদৌ সম্ভব? সম্ভব নয় কেন? সিকিম বা গোয়া হাতের কাছেই আছে৷ রাজ্য কেন, এর থেকে ছোট রাষ্ট্র রয়েছে বিশ্বে৷ ১৯২৯ সালে গঠিত ভ্যাটিকান সিটি৷ আয়তন ১১০০ একর৷ জনসংখ্যা মাত্র ৮৩০ জন৷ আছে সিঙ্গাপুর বা মোনাকো৷ নানা ছোট ছোট সার্বভৌম দেশও রয়েছে৷ আসলে আয়তনটা বড় কথা নয়, সবটাই রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রশ্ন৷ প্রস্তাবিত এই রাজ্যে বানারহাট, দার্জিলিং, বীরপারা, চালসা, জায়গন, কালচিনি, কালিম্পং, কুমারগ্রাম, মালবাজার, মিরিক সহ বেশ কিছু এলাকার অন্তর্ভূক্তি চেয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ বিজেপির থেকে নাখুশ হয়ে ফের তৃণমূলের হাত ধরেই গোর্খ্যাল্যান্ডের পূরণ করতে চান বিমল গুরুং৷ তবে সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটাই দেখার৷

ইতিহাস বলেছে, দার্জিলিং অতীতে কোনও সময়েই বঙ্গের অংশ ছিল না৷ ১৯০৫ সাল পর্যন্ত দার্জিলিং ছিল ভাগলপুর মহকুমায় অন্তর্গত৷ ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দেশের রাজধানী স্থানান্তর হয়৷ এরপর ১৯১২ সালে দার্জিলিংকে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়৷ যদিও তার আগে থেকেই পাহাড়ে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি উঠেছে৷ দার্জিলিং বাংলায় চলে আসার আগে থেকেই ১৯০৭ সালে দার্জিলিংয়ের জন্য পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি ওঠে৷ মর্লে-মিন্টো রিফর্মসের কাছে প্রথম দাবিপত্র পেশ করা হয়েছিল৷ ১৯১৭ সালে এই এলাকা থেকে এক প্রতিনিধিদল মন্টেগু-চেম্সফোর্ডের কাছে বাংলা থেকে আলাদা এক প্রশাসনিক ইউনিট দাবি জানানো হয়৷ ১৯২৯ সালে সাইমন কমিশনের কাছে ওই একই দাবি পেশ করা হয়েছিল৷ এরপর ১৯৩৪ সালে সেক্রেটারি অব স্টেটের কাছে হিলমেন অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে দার্জিলিং জেলাকে বাংলা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়৷ যদিও গোর্খাল্যান্ডের দাবি এখন শুধু গোর্খাদের নয়, তা সমগ্র পাহাড়বাসীর দাবি৷ পাহাড় সংক্রান্ত কোনও চুক্তিতেই বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি৷ ১৯৮৮-র ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতেও ‘জিএনএলএফ গোর্খাল্যান্ডের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে’ বলেও উল্লেখ করা হয়৷ ২০১১-র জুলাইয়ে চুক্তিতে ‘পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে মাথায় রেখেই’ চুক্তি হয়৷

গত ২১ অক্টোবর নাটকীয় ভঙ্গিতে কলকাতার মাটিতে পা রেখেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং৷ শহরে এসে আরও চমক দিয়েছিলেন গুরুং৷ জানিয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ-মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির হাত ছেড়ে এবার দিদির হাত ধরতে চান তিনি৷ কারণ তাদের সঙ্গে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে গেরুয়া শিবির৷ এসবের পর দিদির সমর্থন নিয়েই ফের নিজের ঘরে ফিরতে চান গুরুং৷ বিমল গুরুংয়ের সমর্থনে পাহাড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তাকে স্বাগত জানানোর মিছিল৷ তার সমর্থকেরা মিছিল করে তাকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছে৷ একইসঙ্গে গুরুং যাতে না ফেরে তার জন্যও মিছিল করছেন স্থানীয়রা৷

গুরুংয়ের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১২০টির বেশি মামলায় রয়েছে৷ কোনটায় কী ধারা, কী অভিযোগ? তা আগেই জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ৷ গুরংকে নিয়ে সেই মামলাগুলি এখনও চলছে৷ ২০১৭ সালে জুনে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে আগুন জ্বালানোর পর থেকে পুলিশের খাতায় ফেরার ছিলেন গুরং৷ তারপর থেকে বিমল গুরুং ছিলেন বেপাত্তা৷ পরে চলতি বছর মার্চ মাসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ছেলের বিয়ের ভোজসভায় দেখা গিয়েছিল গুরুংকে৷ নবদম্পতির সঙ্গে বিমল-রোশনের ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক৷ এবার খাস কলকাতায় রাজ্যে প্রথম দেখা দেন গুরুং৷ কিন্তু, ২০১৭ সালের জুনে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি পাহাড়ে আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে টানা ১০৫ দিন ধরে পাহাড় অচল করে দেওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপরে হামলার মতো ঘটনার পর দায়ের হওয়া খুন, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ একাধিক ধারায় মামলার পরও কীভাবে খাস শহর কলকাতায় ঘুরে বেরালেন গুরুং? যাঁকে নাকি দীর্ঘ দিন ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছিল বাংলার পুলিশ! পুজোর মধ্যে গুরুয়ের আর্বিভূত হওয়া নতুন করে বাড়িয়েছে বিতর্ক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 6 =