কলকাতা: কীভাবে চলবে লোকাল ট্রেন? নবান্নে উচ্চ পর্যায়ে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করলেন রেল রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা৷ বৈঠকে রেলের তরফে বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে চলে হয় আলোচনা৷ তবে, আজ বৈঠকে ঠিক কবে লোকাল ট্রেন চলবে, তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগামী বৃহস্পতিবার ফের বৈঠকহবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চলতি বছর ২৪ মার্চ শেষবার গড়িয়েছিল লোকাল ট্রেনের চাকা৷
আজ নবান্নে রাজ্য ও রেলের তরফে বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হলেও দ্রুত পরিষেবা চালুর বিষয়ে সহমত হওয়া গিয়েছে৷ আপাতত ৫০ শতাংশ আসনে লোকাল ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে৷ তবে, লোকাল ট্রেনে ৫০ শতাংশ আসনে কীভাবে যাত্রী পরীষেবা দেওয়া সম্ভব? তা নিয়ে চলছে ভাবনা৷ ই-পাসের কোনও ব্যবস্থা থাকছে না৷ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোকাল ট্রেন চালুর পক্ষে মত প্রকাশ করেছে রাজ্য৷ তবে, ৫০ শতাংশ আসনে ১০-১৫ শতাংশ লোকাল ট্রেন চালিয়ে আদৌ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে তো? যাত্রী ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তো? উঠছে নানান প্রশ্ন৷ তবে, চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে আগামী বৃহস্পতিবার ফের বৈঠত ডাকা হয়েছে নবান্নে৷ সেখানে কবে, কীভাবে লোকাল ট্রেন চালু করা যাতে পারে, তার বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷
আজ বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সঙ্গে ছিলেন পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা৷ সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব জানান, আপাতত এক-চতুর্থাংশ ট্রেন চলাচল করার প্রস্তাব সম্মতি দেওয়া হয়েছে৷ জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পরিষেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যসচিব৷ রেল সফরে মাস্ক ও সেনিটাইজেশন অত্যাবশ্যকীয় বলেও জানিয়েছেন মুখ্যসচিব৷ পূর্ব রেলওয়ে তরফে জানানো হয়েছে, করোনা বিধি মানে পরিষেবা চালু করা হবে৷ তবে আগামী ৫ নভেম্বর লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে৷ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, কীভাবে ট্রেন চালু করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন৷ তবে, রেল দ্রুত পরিষেবা দিতে মরিয়া বলেও জানানো হয়েছে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে৷
রাজ্যে রেল চালানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে পূর্ব রেল। বিগত চিঠির পরিপেক্ষিতে শিয়ালদহ-হাওড়া শাখায় সমস্ত লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে৷ লোকাল ট্রেনে ১২০০ জন যাত্রীর পরিবর্তে ৬০০ জন যাত্রী নিয়ে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে নজর রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যসচিব৷ সঠিক পরিকল্পনা করতে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া ওই বৈঠকে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব৷ ইটিকিটের উপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ই-পাসের কোনও না রাখা হলেও অন্য কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তাচলছে৷ বাধ্যতামূলক হচ্ছে মাস্ক ও থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা৷ কোভিড প্রোটোকল ও জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখতে পরিষেবা দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করে রেল ও রাজ্য৷
রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে মনে করছে, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে যাত্রী স্বার্থের কথা মাথায় রেখে পরিষেবা চালু করা হবে৷ কীভাবে লোকাল ট্রেন চালু করা যা, তা বিস্তারিত আলোচনার জন্য দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর বিকালে ৩ নাগাদ ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ সেখানে করোনা-বিধি মেনে কোন রুটে কীভাবে লোকাল ট্রেনের পরিষেবা নেওয়া সম্ভব, কোন বিষয়ে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, এমনকি সময়সূচি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে নবান্নের বৈঠকে৷
কোভিড প্রোটোকল মেনে দ্রত লোকাল ট্রেন চালু করার পক্ষে অবশেষে সম্মতি দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ করোনা পরিস্থিতির জেরে টানা ৭ মাস বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ আনলক পর্বে বিভিন্ন রাজ্যে ধাপে ধাপে লোকাল ট্রেনের পরিষেবা চালু হলেও ব্যতিক্রম বাংলা৷ অফিস-বাজার-সিনেমা হল খুল গেলেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় দিন ৭ মাস টানা বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ রেল চালু করার বিষয়ে রেলের তরফে দু’টি চিঠি পাঠানো হলেও এতদিন গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য৷ হয়নি কোনও আলোচনা৷ দীর্ঘ দিন ধরে লোকাল বন্ধ থাকায় চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল যাত্রী মহলে৷ সোনারপুরে রেল ভাঙচু, জেলায় জেলায় অবরোধের মতোও ঘটনা ঘটেছে৷ যাত্রী বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে অবশেষে রেলের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসল রাজ্য৷ আর তাতেই কিছুটা হলেও রফাসূত্র মিলিয়েছে৷ তবে, চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও লোকাল ট্রেনের চাকা নতুন করে গড়ানোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে৷ বৃহস্পতিবারের বৈঠক ফলপ্রসূ হলে কালী পুজোর আগে ফের ছুটতে পারে লোকাল ট্রেন৷ অন্যদিকে, অবিলম্বে লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে বৈদ্যবাটি স্টেশন ও বিটি রোর্ডে টানা ১২ ধরে অবরোধ করে রেখেছেন যাত্রীদের একাংশ৷