তপন মল্লিক চৌধুরী : কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা তৃণমূলের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখীবন্দ্যোপাধ্যায় কি রাজনীতিতে আছেন? যদি থেকে থাকেন তাহলে কোন দলে? তাদের নিয়ে এমন প্রশ্ন মাঝে মধ্যেই ওঠে কারণ তাঁরা তখন খবর হয়ে ওঠেন। বছর পেরিয়ে গিয়েছে; তাঁরা বিজেপি দলে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু সেই দলের কোনও কর্মসূচিতে বা কোনও মিটিং-মিছিলে তাদের কেউ দেখেছে বলে মনে করতে পারবেন না।
এমনকি বিজেপিরও কেউ বলতে পারবেন না যে দলের এই অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। তাহলে তারা বিজেপিতে আছেন কেন? তাদের আগে পরে তৃণমূল থেকে এসে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন বহু নেতা কর্মী। তাদের অধিকাংশই এখন বিজেপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিদায় নেওয়ার পর আজ পর্যন্ত শোভন-বৈশাখীদুজনেই নিজেদের পুরোপুরিনিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। সম্প্রতি ওদের দুজনকেই বিজেপির রাজ্য কমিটিতে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও একদিনের জন্য তাদের দলীয় কোনও কাজে অংশ নিতে দেখা যায় নি। তবে তাঁরা বিভিন সময়েই খবরে উঠে আসেন।
করোনাকালের দুর্গোৎসবেমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকেতাদের কাছে উপহার পৌঁছেছে। আর সে খবর সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হওয়া মাত্রইফের শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্ত সেই গুঞ্জন খুব দ্রুতই মিলিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীইজেডসিসিতে যেদিন ভার্চুয়াল দুর্গাপুজো উদ্বোধন করেন, সেই অনুষ্ঠানেও তাঁরাদুজনেই আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেও তাঁরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে পরে কম নাটক তো হয় নি। তবু কেন যেন বিজেপির সঙ্গে ওঁদের দুজনের ঠিক তালমিল হয়েও হচ্ছে না। কখনও দল ওদের অভিমান ভাঙাতে কাছাকাছি হচ্ছে কিন্তু ওঁদের অভিমান থেকেই যাচ্ছে। কখনও ওঁরা দলীয় নেতৃত্বের সামনাসামনি হচ্ছে ওদের প্রাপ্য সম্মান পেতে। কিন্তু দল সবটুকু করে উঠতে পারছে না। প্রত্যেকবার একটা ফাঁক দু’তরফেই থেকে যাচ্ছে। এভাবে কতদিন চলবে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ঢাক তো বেজেই গিয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া বিজেপি ইতিমধ্যেই তার নিজস্ব পদ্ধতি এবং কর্মসুচি অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরুও করে দিয়েছে। সময় যত এগোবে ভোট যুদ্ধের ব্যস্ততা তত বাড়বে। তখন কি আর দলের পক্ষে দু-চার জন নিস্ক্রিয় নেতা কর্মীদের মান অভিমানের কার্যকারণ নিয়ে ভাবার সময় থাকবে!
এই অবস্থায় আজ রবিবার সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে রাজ্য বিজেপির বিজয়া সম্মিলনী। কিন্তু তাতে অনুপস্থিত শোভন-বৈশাখী জুটি। কারণ, ওই বিজয়া সম্মিলনীতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ করা হলেও, বৈশাখীবন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়নি। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথা অনুযায়ী, রবিবার বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বৈশাখীর মোবাইল ফোনে শোভনকে আমন্ত্রণ করা হলেও বৈশাখীকে জানানো হয়নি।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকয়েকদিন রাজ্য সফরে এসেছিলেন, তিনি অনেক রাতে নিউটাউনের হোটেলে শোভন-বৈশাখীকে খবর পাঠিয়ে ডেকে এনে বৈঠক করেছিলেন।বৈশাখী সেই খবর ফেসবুকে পোস্ট করে এই বৈঠক ও রাজ্য বিজেপিতে তাদের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, দিন দুয়েক আগে শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে তাঁদের গোলপার্কের আস্তানায় গিয়ে বহু রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন এবং সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। তারপরও কেন দলের বিজয়া সম্মিলনীতে শোভন আমন্ত্রণ পেলেন আর বৈশাখী বাদ পড়লেন?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে এই ঘটনার মধ্যে শোভন-বৈশাখীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টার কথা বলছেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাকে শোভন গোঁড়াতেই বানচাল করে দিয়েছেন। এদিন সকালেই শোভন ওই অনুষ্ঠানে যে তিনি যাচ্ছেন না, সেকথা স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়ে দেন। তিনি নিজেও বিভাজন কথাটি ব্যবহার করে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে লাভ নেই’। তারপর থেকে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভন- বৈশাখীর নতুন করে ‘মনকষাকষি’ শুরু হয়েছে। বিজেপি দলে শোভন-ঘনিষ্ঠ নেতাদেরও প্রশ্ন, সদ্য ওঁদের দু’জনকেই বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে, তাহলে এক জনকে আমন্ত্রণ জানানো হল, অন্য জনকে বাদ দেওয়া হল কেন?তাঁরাও সেই প্রশ্ন তুলএছেন, তা হলে কি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ শোভন-বৈশাখীর মধ্যে বিভাজন করতে চাইছেন?দিলীপ ঘোষঅবশ্যবৈশাখীকে নিমন্ত্রণ না করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে আজকের পর শোভন-বৈশাখী কি করেন সেটা যেমন দেখার বিষয় অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি বিজয়া সম্মিলনীতে শোভনের অনুপস্থিত থাকা নিয়ে কৈফিয়ত তলব করে কিনা তাও দেখতে হবে।