শুনুকপাহাড়ি: দলের অন্দরে ‘বিদ্রোহে’র আবহে নেতা-মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক সভা থেকে নিজেকে গোটা রাজ্যের একমাত্র ‘অবসার্ভার’ হিসেবে ঘোষণা দলনেত্রীর৷ পরোক্ষে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদেরও বার্তা দিলেন মমতা৷ নাম না নিলেও মমতার হুঁশিয়ারির মুখে কে, তা কার্যত পরিষ্কার বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ দলের অন্দরে যখন দলবদলের বিতর্ক চড়ছে, ঠিক তখনই মমতার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ছাগল ছানা ছেড়ে রাখতে হয়! কিছুদিন ছেড়ে রেখাছিলাম৷’’ ‘ছাগল ছেড়ে রাখার’ উপমা দিয়ে আদতে মমতা কাকে হুঁশিয়ারি দিলেন? হালের বঙ্গ রাজনীতিতে মমতার এই মন্তব্যে যথেষ্ট তাৎপর্য দেখছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
এদিন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নেতা হিসেবে নয়, দলের একজন কর্মী হিসেবে গোটা বাংলার একমাত্র অবজার্ভার তিনি। কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, সব হিসেব তিনি রাখেন। এই প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, “দিদি কিছু জানেন না এটা যেন একেবারেই না ভাবা হয়। দিদি সব জানে। দিদি ছেড়ে রেখেছে তাদের এই কারণে, যে তারা যে যোগাযোগ রাখছে এটা তো আমায় বুঝতে হবে। কারণ সে যে যোগাযোগ রাখছে, সেই যোগাযোগ রেখে সেখানকার খবরটাও পাস করছে। এটাও মাথায় রাখবেন”। এই মন্তব্য করেই তিনি ‘ছাগল ছেড়ে রাখার’ উপমা দিয়েছেন। মমতার কথায়, ছাগলের একটা ছানাকে ছেড়ে রাখতে হয়। দুটো ছানাকে ঘরে রেখে দিতে হয়, আর একটা ছানাকে ছেড়ে দিতে হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা ছাগলের তৃতীয় সন্তান, ধান্দাবাজ। তৃণমূল সুপ্রিমো দাবি করেন, ধান্দাবাজদের একটা গোষ্ঠী আছে তবে তারা সংখ্যায় কম। এই প্রেক্ষিতেই সব কর্মীদের বার্তা দিয়ে বলেন, সব এলাকায় নজর রাখতে। রাতের বেলা কার বাড়িকে কে যাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে কার ফোন থেকে কে কথা বলছে। খবর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, রাতের বেলা বিনা কাজে কে বেরিয়ে যাচ্ছে। মমতার কথায়, কিছু লোক টাকা দিয়ে বাংলা দখল করার চেষ্টা করছে, কিন্তু বাংলা টাকার কাছে বিক্রি হবে না। বাংলা হুমকির কাছে আত্মসমর্পণ করে না।
বিগত কিছু সপ্তাহ ধরে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রীদের নাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে গেরুয়া শিবিরের নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। এমনকি দাবি করা হয়, তৃণমূলের ৫ জন সাংসদ নাকি বিজেপিতে আসতে তৈরি। সেই নিয়ে বিরাট জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল। তাঁকে নিয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক করে ফেলেছে তাঁরা। যদিও বাংলার রাজনৈতিক দল কোন দিকে গড়াচ্ছে তা জানতে এখনো বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে তা স্পষ্ট। বহু আগে থেকেই তৃনমূল কংগ্রেস ভাঙতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি, এখন কিছু মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কতটা সফল হবেই বিজেপি, আর কতটা নিজেদের দলকে রক্ষা করতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা তো সময়ই বলবে।