‘গণতন্ত্রণের লজ্জা! আগুন নিয়ে খেলবেন না’, মমতাকে হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের

‘গণতন্ত্রণের লজ্জা! আগুন নিয়ে খেলবেন না’, মমতাকে হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের

43c4f5e48895cf5e2c4c29c8416cda32

কলকাতা: বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা নিয়ে উত্তাল রাজনৈতিক মহল৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়৷ ওই রিপোর্টে যথেষ্ট নিরাপত্তা না থাকার অভিযোগ তুলেছেন তিনি৷ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে শাসক দলকে তুলোধোনা করলেন রাজ্যপাল৷ 

তিনি বলেন, আমি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি৷ সংবিধানকে রক্ষা করাই আমার কর্বত্য৷ গণতান্ত্রিক মূল্য, মানবাধিক, আইনের শাসনকে রক্ষা করাই প্রাথমিক শর্ত৷ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বা এর সীমাব্ধতা হল মানুষের সেবা করা৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকলেই রাজ্যের মানুষের সেবা করা সম্ভব৷ 

আরও পড়ুন- ‘সুরক্ষিত’ নাড্ডার কনভয়ে হামলা: ‘ছোট ঘটনা’য় গ্রেফতার ৭ দুষ্কৃতী

তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবিধানের উর্ধে নয়৷ তাঁরও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে৷ ওঁকে সংবিধান মেনে চলতেই হবে৷ তিনি বলেন, বারবার সতর্ক করার পরেও রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে৷ গততকাল ডায়মন্ড হারবারের যে ঘটনা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক৷ সংবিধান অবমাননা করা হয়েছে৷ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মাথা নত হয়ে গিয়েছে৷ গণতন্ত্র সকলের নিজের মতামত ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ডায়মন্ডহারবার এবং শিলিগুড়িতে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে৷ গতকাল ছিল বিশ্ব মানবাধিকার দিবস৷ এদিন রাজ্যে কী পরিস্থিতি হল! 

রাজ্যপাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অবমানাকর ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ সংবিধান মেনে চলা একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কী ভাবে এই ধরনের ভাষা প্রয়োগ করতে পারেন৷ বাঙলি সংস্কৃতির কথা, সংস্কারের কথা আরও একবার ভেবে দেখতে বলেছি ওঁকে৷ ওঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত৷ ক্ষমা চাইলে ওঁরই সন্মান বাড়বে৷ তিনি একজন বর্ষীয়ান নেত্রী৷ গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্যে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত তাঁর৷ 

স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদদের প্রতি তাঁর আবেদন,  সংবিধানকে কলঙ্কিত না করে রাজনৈতিক সমাবেশে সুস্থভাবে যোগ দিন৷ নাম করেই তিনি বলেন, ডায়মন্ডবারবারের সাংসদ একজন তরুণ নেতা৷ তাঁর নিজের ভাষার প্রতি সংযম থাকা উচিত৷ উনি ওঁনার চেয়ে বয়সে বড় একজনের সম্পর্কে কী বলছেন তা ভাবা উচিত৷ সৌগত রায়কেও আমি সম্মান করি৷ কিন্তু ওঁর বিবৃতি দুর্ভাগ্যজনক৷ 

তাঁর অভিযোগ, চারিদিকে দুর্নীতি হচ্ছে৷ বিরোধীরা প্রতিবাদ করার জায়গাই পাচ্ছে না। নৃশংস ভাবে বিরোধীদের ক্রিয়াকলাপকে দমন করার চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রিপোর্ট পাঠিয়ে জানিয়েছি। এমন ঘটনা আর বরদাস্ত করা হবে না। 

বহিরাগত ইস্যুতেও এদিন সুর চড়ান রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, দেশের নাগরিকদেরই বহিরাগত বলছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দয়া করে আগুন নিয়ে খেলবেন না৷ সংবিধান মেনে চলা কোনও মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷  ভারতবর্ষের আত্মা এক, নাগরিকত্ব এক৷ ভয়ঙ্কর খেলায় নেমেছেন উনি৷ আপনি সংবিধান থেকে সরলে আমার দায়িত্ব শুরু হবে৷ 

আরও পড়ুন- নাড্ডার কনভয়ে হামলা: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল

রাজ্যপাল বলেন, কালকের ঘটনা জানার পর চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক৷ রাজ্যের ডিজিপি এবং মুখ্যসচিবকে সকালেই এই বিষয়ে সাবধান করেছিলাম৷ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কথায় সতর্ক হলে এমন ঘটে না৷ প্রশাসন কোনও সহযোগিতা করছে না৷ মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি পাঠিয়েও জবাব মেলেনি৷ 

তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবাংলায় প্রশাসনের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে৷ কিছু আমলা সরকারি কর্মী না হয়ে রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে উঠেছেন৷ এমন ২১ জন আমলার নাম তালিকাভুক্ত করেছি৷ এই গোপন তথ্যটা মুখ্যমন্ত্রীকে দেব৷ তিনি বলেন, রাজ্যের উপদেষ্টার কাজটা কী? অবসরের পরেও কেন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাঁকে? এডিজি আইনশৃঙ্খলা নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত। 

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করা হয়ছে৷ কিন্তু বেঙ্গল সামিটে ১২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটির বিনিয়োগ কোথায় গেল? মাটির উপরে না নীচে? সমুদ্রে না আকাশে? কে এই বিনিয়োগ করছে? ১০ বছরের কৃতিত্ব দাবি করছেন। আমার চিঠির জবাব দিতে পারছে না উনি৷ এখানে স্বজনপোষণ চলছে কোনও কাজে স্বচ্ছ্বতা নেই৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *