বাংলায় হবে ১কোটি ৭৫ লক্ষ চাকরি! ভোটের আগে ‘স্বপ্ন-ফেরি’ তৃণমূল-বিজেপির

যদিও সম্প্রতি যে সমীক্ষা প্রকাশ পেয়েছে তা একেবারেই ভিন্ন কথা বলছে।

dbe14db098e9f26b7560f74e0548d3fe

 

কলকাতা: নির্বাচনের প্রাক্কালে একাধিক বিষয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলি। আর কিছু মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেবে না সেটা বাস্তবে সম্ভব নয়। এখন দেশ তথা রাজ্যের সবচেয়ে বড় ইস্যু হল কর্মসংস্থান। বিজেপি সরকারের আমলে দেশের কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা শেষ কয়েক বছর ধরেই চলছে। কেন্দ্রীয় যতই দাবি করুক দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে, কিন্তু সমীক্ষা একেবারেই সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে না। শেষ লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই দেশের কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। একাধিক রিপোর্ট সামনে এনে দেখানো হয়েছিল ৪৫ বছরের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কর্মসংস্থানে। পরবর্তী ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জন্য দেশের কর্মসংস্থান আরো বেশি তলানিতে ঠেকেছে। যদিও প্রতিশ্রুতি দিতে কোনো খামতি রাখছে না বিজেপি। একই রকম ভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের কর্মসংস্থানের প্রগতি নিয়ে দাবি করেছে। যদিও সম্প্রতি যে সমীক্ষা প্রকাশ পেয়েছে তা একেবারেই ভিন্ন কথা বলছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এলেই ৭৫ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। এদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, ইতিমধ্যে বাংলায় ১ কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। তাহলে একটা বিষয় স্পষ্ট, বিজেপি যদি বাংলায় ক্ষমতায় আসে আর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭৫ লক্ষ চাকরি দেয়, তাহলে বাংলায় মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। সেই প্রেক্ষিতে অবশ্যই বলা যায়, বাংলা থেকে ভিন্ন রাজ্যে আর কাউকে চাকরি করতে যেতে হয়তো হবে না। কিন্তু বাংলার তথা দেশের কর্মসংস্থানের যা পরিস্থিতি তাতে এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সিএমআইই-র সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের পর থেকে ক্রমাগত কর্মসংস্থানের হার কমতে শুরু করেছে দেশে। মার্চ মাসে যেখানে কর্মসংস্থানের হার ছিল ৮.৮ শতাংশ, সেখানে গত নভেম্বরে সেই শতাংশ নেমে দাঁড়িয়েছে ৬.৫-এ। যদিও এপ্রিল এবং মে মাসে দেশের কর্মসংস্থানের হার যথাক্রমে ছিল ২৩.৫, ২১.৭ শতাংশ। তারপর সেই ভাবে কর্মসংস্থানের হার বাড়েনি। এদিকে বাংলায় মার্চ মাসে কর্মসংস্থানের হার ছিল ৬.৯ শতাংশ, উল্লেখযোগ্য ভাবে তার নভেম্বর মাসের বেড়ে হয়েছে ১১.২ শতাংশ। সমীক্ষা অনুযায়ী বলা যায়, দেশের কর্মসংস্থানের হার কমার পাশাপাশি বাংলায় কর্মসংস্থানের হার কিঞ্চিৎ বাড়লেও, রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ হয়নি একেবারেই। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে লক্ষ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে সেই নিয়ে এখন তর্ক করা যায়।

বিভিন্ন সময় সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা মন্ত্রীরা দাবি করেছেন বাংলায় কর্মসংস্থান হয়েছে যথাযথভাবে। এমনকি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রাজত্বে যেখানে দেশের কর্মসংস্থানের হার কমেছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে রাজ্যে। সেই নিয়ে অবশ্যই বিতর্কে জড়িয়েছে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। অন্যদিকে, বিজেপি সরকারের আমলে দেশজুড়ে কর্মসংস্থানের সার্বিক চিত্র খুব একটা অনুকূল নয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং লকডাউন পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তী ক্ষেত্রে যুবসমাজকে সেই চাকরি প্রদান করা হবে সে নিয়ে ধন্দ রয়ে যাচ্ছে। কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি সরকার দেশের যুবসমাজকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বছরে ২ কোটি করে চাকরি দেওয়া হবে। ক্ষমতায় থাকার ৬ বছর হয়ে গেলেও এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করতে পারেনি বিজেপি সরকার। এদিকে আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গ বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ৭৫ লক্ষ চাকরির। তাই অবশ্য ভাবে প্রশ্ন উঠে গেছে, এই প্রতিশ্রুতিও শুধুমাত্র নির্বাচনী সুবিধা নেওয়ার জন্য নয় তো? প্রসঙ্গত, ‘চাকরি প্রতিশ্রুতি কার্ড’ নামক একটি প্রচার কর্মসূচি তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপির দাবি, ‘চাকরি প্রতিশ্রুতি কার্ড’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৭৫ লক্ষ বেকার যুবকদের কাছে পৌঁছে যাবেন বিজেপি কর্মীরা। ওই কার্ডে চাকরি প্রার্থীদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পছন্দের কাজ নথিভুক্ত করা হবে। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে আগামী ৫ বছরে ওই যুবকদের চাকরি দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *