প্রশাসনের মদতে মরছে সুন্দরবন! সুন্দরী রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রশাসনের মদতে মরছে সুন্দরবন! সুন্দরী রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হাইকোর্টের

কলকাতা: প্রশাসনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদত ছাড়া কখনই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করে মাছের ভেরি করা সম্ভব নয়৷ রাজ্য প্রশাসনকে সমালোচনা করে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করে তৈরি হওয়া অবৈধ নির্মাণ অবিলম্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের৷

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস রুখতে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলায় কড়া নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ৷ নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্যের মুখ্যসচিব ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকেএই ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে বলে হাইকোর্ট সূত্রে খবর৷  ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রসাশনের একাংশের মদতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করে অজস্র মাছের ভেড়ি তৈরি হতে পারে না৷ রাজ্যের অস্তিত্ব ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার স্বার্থে যে-কোনও মূল্যে এই অরণ্যকে রক্ষা করতে হবে৷  এমনই পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চর৷ দেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশ৷

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অজয় রানেডে নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে বেঞ্চ৷ অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করতে এই কমিটি সুন্দরবনের সব এলাকা ঘুরবে৷ সর্বস্তরে রাজ্যকে এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে৷ যে-কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির নথিপত্র কমিটি দরকার হলে দেখতে পারবে৷ কোনও নথি সঠিক মনে না হলে কমিটি স্থানীয় পুলিশকে তা বন্ধ করার পরামর্শ দেবে৷ ২১ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির আগে কমিটিকে আদালতে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে৷ এই নির্দেশ মুখ্যসচিবকে পাঠাতে বলে বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও রকম রাজনৈতিক বাধা আসলে এই বিষয়ে প্রসাশনকে উপযুক্ত কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে৷

ডিভিশন বেঞ্চের মনে করে, প্রশাসনের একাংশ এবং রাজনৈতিক মদত ছাড়া এই বেআইনি কারবারের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷ নির্দেশে বলা হয়েছে, রাজ্যের দক্ষিণাংশে যে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে, তার গুরুত্ব অপরিসীম। তা যদি হারিয়ে যায়, তবে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে রাজ্যের দক্ষিণের জেলাগুলিতে৷ মামলাকারী কালাম পৈলান জানান, অরণ্যের জমিতে লাগাতার বেআইনি পথে মাছের ভেড়ি বানানো হচ্ছে। চিংড়ি চাষের জন্য নোনা জলের অজস্র ভেড়ি গজিয়ে উঠছে রাতারাতি৷ ফলে পার্শ্ববর্তী চাষের জমি নষ্ট হচ্ছে৷ এই প্রসঙ্গে বেঞ্চ ২০০৪ সালে সুনামি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কী প্রভাব পড়েছিল তা উল্লেখ করেছে৷ কিন্তু, তা ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷ সুন্দরবনে মানুষই জমিতে নোনা জল ঢোকাচ্ছে৷ এবিষয়ে প্রশাসন যদি সজাগ থাকে, রাজনৈতিক মানুষ যদি ম্যানগ্রোভ রক্ষায় সচেতন থাকেন, তাহলে এ কারবার চলতে পারে না৷ জেলাশাসককে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ম্যানগ্রোভ অরণ্যে যে-কোনও রকম অন্যায় কাজ কাজকর্ম বন্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে৷ এজন্য দায়িত্ববান অফিসারদের কাজে লাগাতে হবে৷ প্রসাশনকে আচমকা অভিযান চালাতে হবে, যাতে এই ধরনের অন্যায় কাজ স্থানীয় মানুষ না করতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =