বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসতেই তৎপরতা বাড়ছে রাজধানীতে। চলছে হিসেব নিকেষ৷ বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্যান্য ইস্যুর মতোই পাহাড় নিয়েও তৎপরতা বাড়িয়েছেন নয়াদিল্লির বিজেপি নেতারা। বুধবার জিএনএলএফ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়। দুপুর ২টোয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহের বাড়িতে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। সূত্রের খবর, এদিন ইন্দোর থেকে এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় দিল্লি এসে পৌঁছাতে না পারায় বৈঠক বাতিল করা হয়। পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে এদিনের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যদিও তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় কিছুটা হতাশ পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলটি৷
সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাক পেয়েই দিল্লিতে আসেন মান ঘিসিং, দলের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী এবং দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা। মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন, ‘‘সোমবার আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে ফোন পাই, আমাদের বলা হয়, দিল্লিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করা যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন৷ তবে বৈঠকের বিষয় এবং স্থান পরে জানানো হবে।’’ যদিও দিল্লিতে পৌঁছানোর পরেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৬ নম্বর কৃষ্ণমেনন মার্গের বাড়িতেই বৈঠক হবে। তিনি জানান, “আমরা শুধুমাত্র পাহাড়ের রাজনৈতিক স্থায়ী সমাধানের কথা বলেছি, অন্য কোনও বিষয়ে নয়।” ২০০৯ থেকে বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। তবে সম্প্রতি তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থনের কথা জানিয়ে দেন। এরপরেই দ্রুত বদলে যেতে থাকে পাহাড়ের রাজডনৈতিক সমীকরণ।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে ঘাঁটছড়া বাঁধে জিএনএলএফ বা গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনে নীরজ জিম্বাকে প্রার্থীও করা হয়। সূত্রের খবর, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বিজেপির নীরবতায় অসন্তুষ্ট জিএনএলএফ। বেশ কিছুদিন ধরেই দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু ভিস্তের বিরুদ্ধে সরব তাঁরা। অপরদিকে, বিজেপি ছেড়ে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়েছে বিমল গুরুং শিবির। যদিও একসময়ে মমতা ঘনিষ্ঠ তথা পাহাড়ের বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান বিনয় তামাং বিজেপির দিকে সমর্মথনের হাত বাড়িয়েছেন৷
তবে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে তারা এককাট্টা। ফলে পাহাড় যে বিধানসবা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন দিল্লির পদ্ম বাগানের কর্তাব্যক্তিরা। পাহাড়ি মাটিতে পদ্মফুল ফোটাতে গেলে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন জরুরি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই জন্যই সময় থাকতেই পাহাড়ের শক্ত মাটিতে জল ঢেলে পদ্মফুল ফোটানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে নয়াদিল্লির তরফে। তারই একটি পদক্ষেপ এদিনের বৈঠকের আয়োজন, মত রাজনৈতিক মহলের।