তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু অধিকারী, নেত্রীকে বিচ্ছেদের বার্তা!

তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু অধিকারী, নেত্রীকে বিচ্ছেদের বার্তা!

 

কলকাতা: প্রায় আড়াই দশকের সম্পর্কে ইতি টানলেন শুভেন্দু অধিকারী। মন্ত্রিত্ব ও বিধায়ক পদ ছাড়ার পর এবার সরাসরি তৃণমূলের সদস্যপদ ছাড়লেন শুভেন্দু অধিকারী৷ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দল ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শুভেন্দু৷ তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি৷ তবে, কী কারণে তিনি দল ছাড়লেন তা এখনও জানাননি নন্দীগ্রামের দাপুটে এই নেতা৷

মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর গতকাল বিধানসভা ভবনে গিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকায় তার সচিবের হাতে ইস্তফা পত্র জমা দেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী নিজের তরফ থেকে বিধায়ক পদ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও তাঁর পদত্যাগপত্র নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেল। কারণ গতকালই অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছিলেন, শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগপত্র বিধিসম্মত নয়, সুতরাং সেটি গ্রহণ করা যায়নি। এদিনও সংবাদ মাধ্যমের সামনে একই কথা আরো একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি৷ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিলেও এবার সরাসরি তৃণমূলের সদস্যপদ ছাড়লেন শুভেন্দু৷ 

বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা প্রসঙ্গে আজ বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফাপত্র বিধিসম্মত নয়। আজ তিনি সচিবের থেকে সেই ইস্তফাপত্র হাতে পেয়েছেন, সেটি পরীক্ষা করে দেখার ব্যাপার আছে। পরীক্ষা করার পর তিনি সেই প্রেক্ষিতে একটি অর্ডার দেবেন। যতক্ষণ না সেই অর্ডার দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যায়না শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে বা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অর্ডার এর পরেই সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে তিনি এও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত পদত্যাগপত্র গৃহীত বা প্রত্যাখ্যান না করা হলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করা যেতেই পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে সেই পদত্যাগপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার উপর এবং অর্ডারের ওপর। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী খাতায়-কলমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পদে থেকে গেলেও আচমকা শুভেন্দুর তৃণমূল থেকে ইস্তফা নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে৷

প্রসঙ্গত বিগত কয়েক মাস ধরে শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে বিপুল পরিমাণ চর্চা হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। একাধিক জায়গায় জনসভা করে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। এরপর জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ নভেম্বর হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। তারপর রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি, ঠিক তার ১৯ দিনের মাথায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বিধানসভায় যান শুভেন্দু অধিকারী৷ এবার ছাড়লেন দল৷ 

সূত্রের খবর, আগামী শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জনসভার মধ্যে দিয়েই বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি যে বিজেপিতে যোগদান দেবেন সে নিয়ে চর্চা প্রথম থেকেই ছিল, তবে শুধু জনসমক্ষে ঘোষণা বাকি ছিল। এখন তিনি যে বিজেপিতে যোগদান করছেন তা মোটামুটি পরিষ্কার। বিগত কিছুদিনে নাম না করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ঘাসফুলের একাধিক নেতাকে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। ইঙ্গিত দিয়েছেন, যারা বড় বড় কথা বলছেন তারা ভোটের বাক্সের মাধ্যমে জবাব পেয়ে যাবেন। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও পরোক্ষে আক্রমণ করা হয়েছে তাঁকে। সবমিলিয়ে এটা বোঝা শক্ত নয় যে, রাজনৈতিক ময়দানে খুব শীঘ্রই সম্মুখসমরে আসতে চলেছেন মমতা এবং শুভেন্দু। সেই প্রেক্ষিতে ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আবহাওয়া কি হতে চলেছে তার আন্দাজ কিছুটা হলেও করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *