মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান যদি দিনের সেরা রাজনৈতিক ঘটনা হয় তবে একটু থামুন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় এসে নিজের বক্তব্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন – বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ শব্দের ব্যবহার তৃণমূলকে আখেরে কোনও রাজনৈতিক লাভ দেবে না।
বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসু’র মূর্তিতে মালা পরিয়ে অমিত শাহ বললেন, ” গীতা হাতে ১৮ বছরের ক্ষুদিরাম ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়েছিল। বলার মত, আজকের দিনেই রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকুল্লা খান, ঠাকুর রওশন সিংকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। বাংলায় এসেছি। এক নতুন উদ্যম অনুভব করছি। বাংলার যুব সমাজকে বলতে চাইব, দেশের জন্য মৃত্যু বরণ করার সুযোগ আমরা পাইনি। কিন্তু, দেশের জন্য বেঁচে থাকার সুযোগ তো পেয়েছি। ক্ষুদিরাম বসুকে মনে করে সেই রাস্তা প্রশস্ত করা উচিত।”
এর পরেই তিনি বলেন, “বাংলায় যারা নিচু রাজনীতি করেন তাদের বলতে এসেছি, ক্ষুদিরাম বোস যতটা যতটা বাংলার ততটাই সারা ভারতের। আবার রামপ্রসাদ বিসমিল যতটা উত্তরপ্রদেশের ততটাই বাংলার। যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল তারা এত নিচু রাজনীতির কথা চিন্তা করতে পারত না।” বিজেপি বাঙালিদের পার্টি নয়, দিল্লির বিজেপি নেতারা বহিরাগত, এমন প্রচার শাসক দল তৃনামল কংগ্রেসের তরফ থেকে হতে শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা জগৎ প্রকাশ নাড্ডার বাংলায় আগমন এবং সভা করাকে কেন্দ্র করে নানান যুক্তি খাড়া করেছে শাসক দল। প্রধান যুক্তি হল বিজেপি নেতারা বহিরাগত।
২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তারা নিশ্চিত করেছে। যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২২.৭৬ শতাংশ বেশি। এই ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে কোনও কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তা যে ধর্মীয় মেরুকরণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধানসভায় বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ফলাফল বিচার করতে হয় তবে দেখা যাবে বিজেপি প্রায় ১২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জিতেছিল। বিধানসভার ফলাফল বিচার করলে ১৬৩টি আসলে তৃণমূলের এগিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে লোকসভার নিরিখে বিচার করলে বোঝা যায় তৃণমূল অন্তত ৪১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
অঙ্ক বলছে মমতা ১৮টি আসনে হেরে গিয়েছেন তবে ভোটে হারেননি – ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট তাঁর দিকে ছিল। বিজেপি ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তাঁকে অবশ্য চিন্তায় রেখেছিল। কিন্তু, তা ছিল কোভিড এবং আমফান পূর্ববর্তী সময়। বাঙলার রাজনীতিতে কোভিড এবং আমফান বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও অতীতে নারদা বা সারদা কেলেঙ্কারির মত দূর্নীতির অভিযোগ রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে কোণঠাসা করলেও ভোটযন্ত্রে তার শূন্য প্রভাব পড়েছে। তা নিয়ে মমতা চিন্তিত হবেন, এমন কারণ নেই। কিন্তু, মেরুকরণের চাল মমতা ২০১৯ সালে বুঝে উঠতে পারেনি বলেই মনে হয়। ২০২১ এর আগে বাড়তি সতর্ক থাকবেন মমতা।