‘মিটিংয়ে বিরক্ত করবেন না’, বেতন বৃদ্ধি ইস্যুতে সভায় ছন্দপতন! ক্ষুব্ধ মমতা

এদিকে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সভা‌ সভা শেষ হবার বেশ কিছুক্ষণ আগেই অনেকের সভা ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলেন।

রাণাঘাট: রানাঘাটের হবিবপুরের ছাতিমতলা ময়দানে এদিন জনসভা করে একদিকে যেমন বাংলার উন্নয়নের খতিয়ান ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠিক তেমনই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ করেন তিনি। কিন্তু অনেকটা ‘এক সের দুধে, একফোঁটা চোনা’র মতো ঘটনা ঘটে গেল আজ। হঠাৎ মমতার সভায় ছন্দপতন ঘটলো। বেতন বৃদ্ধি ইস্যু নিয়ে খানিকটা শোরগোল শুরু হল, যার প্রেক্ষিতে মমতাকে ভরা সভায় বলতে হল, ‘মিটিংয়ে বিরক্ত করবেন না’! সব মিলিয়ে বেশ অস্বস্তিকর পরিবেশ পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন জনসভায় বক্তৃতা রাখার সময় হঠাৎ কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন তারা হঠাৎ ছবি তুলছে কেন। তারপরই তিনি কার্যত বিরক্ত হয়ে বলেন, “কারোর কিছু বলার থাকলে একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু এইভাবে মিটিংয়ে ডিস্টার্ব করবেন না। দয়া করে। কে কি বলল সেই বিষয় নিয়ে দুয়ারে সরকার আছে সেখানে চিঠি দিতেই পারে। চিঠি দিয়ে দেবেন পরে, মিটিংয়ের পরে, এখন নয়।” এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, মিটিংয়ে কেউ এভাবে ডিস্টার্ব করলে তার একেবারেই ভাল লাগে না। তবে একই প্রসঙ্গে হঠাৎ এই রকম ছন্দপতন ঘটে গেল ভরা সভায়? সে ব্যাপারও পরিষ্কার হয়ে যায় মমতার কথায়। তিনি বলেন, যারা এই ধরনের কাজ করছেন তারাও জানেন, মাত্র এক মাস আগে আইসিডিএস এবং আশা কর্মীদের ১০০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে, সহায়িকাদের ৫০০ টাকা করে। মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয় না, এদিকে রাজ্য সরকারের কাছে টাকা নেই। চাইলে সরকার আইসিডিএস বন্ধ করে দিতে পারতো কিন্তু করেনি। আগের বছরও বেতন বাড়ানো হয়েছে, এ বছরেও মাত্র একমাস আগে বেতন বাড়িয়েছে সরকার। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আগে কেন্দ্রীয় সরকার ৯০ শতাংশ টাকা দিত এবং রাজ্য সরকার দিত ১০ শতাংশ। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা দেওয়ার পরিমাণ ৪০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। সামগ্রিক ঘটনায় প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে মমতা বলেন, এই রাজ্য সরকার বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্য দেয়। গোটা পৃথিবীতে এমন একটা রাজ্য সরকার দেখাতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও দাবি করেন মমতা। 

এদিকে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সভা‌ সভা শেষ হবার বেশ কিছুক্ষণ আগেই অনেকের সভা ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘যারা যেতে চায় তাদের ছেড়ে দিন। তারা চলে যাক, কোন অসুবিধা নেই। অনেকক্ষণ এসেছে তারা, বাড়িতে অনেক কাজ আছে। বাইরে এখনো ৩০-৪০ হাজার লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ঢুকে যাবে।’ সম্প্রতি বিজেপির সভায় এই ধরনের দৃশ্য দেখা যাওয়ার পর কটাক্ষ শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এখন একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের সভায়, যেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা রাখছেন। শেষ কবে শাসক দলের সভায় এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল তা নিয়ে অংক করতে হবে। তবে এই ঘটনায় শাসকদল যে ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়েছে তা বলাই বাহুল্য।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + four =