কলকাতা: রাজ্যে সরকারি পদে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এখন একুশের ভোটের আগে শাসকদলের বিরুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বাংলায় ভোট পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, সেই সময় সামনে এল রাজ্যের শিক্ষক মহলের আরও এক সমস্যার কথা।
ইনক্রিমেন্ট লস্ট (Increment lost) ও তৎসংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে এবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কয়েক হাজার বিএড (B. Ed) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা৷ এমনটাই অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের৷ শুধু বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট লস্ট নয়, তৈরি হয়েছে এরিয়ারও। অতিমারীর আবহে দেশ জুড়ে চাকরির বাজারে মন্দা এমনিতেই চিন্তায় রেখেছে মানুষকে। তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট লস্ট চালু হওয়ায় স্বভাবতই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বিকাশ ভবনের “ALL POST GRADUATE TEACHERS’ WELFARE ASSOCIATION” সংগঠনের তরফ থেকে রাজ্যের বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বহু শিক্ষক সম্প্রতি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, স্কুল কমিশনারকে লিখিত দেওয়া হয়েছে। ঠিক কোন কোন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে? শিক্ষক সংগঠনের দাবি, অধিকাংশ শিক্ষক নির্ধারিত ৫ বছরের মধ্যে তাদের বিএড প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। বিএড কলেজের স্বল্পতাই এর কারণ।
এছাড়া, কোনো বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকের সংখ্যা বেশি থাকলে, তাদের প্রশিক্ষণের অনুমতির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। বস্তুত, উচ্চমাধ্যমিকের বিভিন্ন বিষয় যেমন মিউজিক, কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, হোম সায়েন্স ইত্যাদির বিএড প্রশিক্ষণের কলেজ সংখ্যা রাজ্যে অত্যন্ত কম। ইনক্রিমেন্ট লসের ক্ষেত্রে এটিও বড় কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ব৷
২০১৫ সাল থেকে বিএড কোর্সের সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয় ২ বছর। তার উপর পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে আসন সংখ্যাও হ্রাস পেয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এর ফলে বিএড প্রশিক্ষণ আরো কঠিন হয়ে পড়ে বলেই দাবি শিক্ষক মহলের। শিক্ষা দফতরে পাঠানো চিঠিতে শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে লস্ট ইনক্রিমেন্ট জনিত বকেয়া এরিয়ার মিটিয়ে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের তরবে মনোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যাদের জয়নিং এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের ইনক্রিমেন্ট চালু করা হোক। তাছাড়া বকেয়া এরিয়ার মিটিয়ে দিতে হবে শিক্ষা দফতরকে।’’ প্রাক-নির্বাচনী আবহে শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত এই জটিলতা নিঃসন্দেহে চিন্তায় ফেলবে সরকারকে৷