কলকাতা: আপনার বাড়ির বছর পাঁচেকের শান্তশিষ্ট শিশু কি লকডাউনের পর থেকেই হঠাৎ দুরন্ত হয়ে পড়েছে? কিংবা বছর দশেকের শিশুটি হঠাৎই হয়ে পড়েছে চুপচাপ, মনমরা? সারাদিন কার্টুন আর গেমস নিয়ে কথা বলার বদলে কি সেও চিন্তা করছে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা নিয়ে?
বস্তুত, করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী অতিমারীর কোপ থেকে রেহাই পায়নি শৈশব। লকডাউন আর তারপরের আচমকা গৃহবন্দি এই জীবন শিশুদের মনে বিচিত্র প্রভাব ফেলেছে। শিশুদেরকে কীভাবে এই কঠিন হতাশাময় পরিস্থিতিতে ভালো রাখা যায়, এদিন সে পরামর্শই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক সেমিনারে শৈশব উন্নয়ন উপদেষ্টা মিলা সেনগুপ্ত বলেন, “শিশুরা সাধারণত প্রাণবন্ত হয়, কিন্তু এই অতিমারীর পরিস্থিতি তাদের বিভ্রান্ত করেছে। এর ফলে আমাদের চারপাশে যা যা পরিবর্তন এসেছে তা বোঝার মতো পরিণত মানসিক অবস্থা ওদের নেই।”
জানা গেছে, সল্টলেকের এক এনজিও ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’ (Change Initiative)-এর তরফ থেকে করোনা কালে শিশুদের অবস্থা এবং নানা জটিলতার সমাধান বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল।আর তাতেই বক্তব্য রেখেছেন নানা মহলের উপদেষ্টারা। শিশুদের এই আকস্মিক হতাশার আবহ থেকে কীভাবে বের করে আনা যায়? মিলা সেনগুপ্তের কথায়, “ভালো হোক বা খারাপ, যে কোনো পরিস্থিতিকেই, শিক্ষনীয় করে তোলা সম্ভব। শুধু বাবা মাকে তার কায়দাটা জানতে হবে।”
সল্টলেকের ওই এনজিওটি মূলত শিশু শিক্ষা এবং তৎসক্রান্ত নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে। এনজিওর ডিরেক্টর ঝুম্পা ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে শিশুদের মা বাবার তরফ থেকে এই ধরণের সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অনুরোধ আসছিল। “মহামারীর এই পরিস্থিতিতে শিশুদের সামলে রাখার জন্য ওঁদের সাহায্যের খুবই দরকার হচ্ছে”, জানান তিনি।
শহরের এক ক্যান্সার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ তথা বিশেষ পরামর্শদাতা সুবর্ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই কঠিন সময়ে ওয়েব মিনার এবং ওয়ার্কশপ গুলি শিশুদের অভিভাবকদের জন্য খুবই জরুরি। তাঁর কথায়, “ওঁরা শুধু নিজেদের সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিই শিখবেন না, এই সমস্ত সেমিনারে যোগ দিলে তাঁদের মতো একই সমস্যার সম্মুখীন আরো একাধিক মানুষের সঙ্গে তাঁদের পরিচিতি হবে, ফলে সমস্যা নিয়ে তাঁরা কিছুটা আশ্বস্ত হবেন।”
বস্তুত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ গোটা পৃথিবীর বুকে যে অভিশাপ নিয়ে এসেছিল তার বিভিন্ন দিক গুলো মেনে নেওয়া শিশুদের জন্য বেশ কঠিন। তাই অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিজেদের সন্তানের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের সঙ্গে আরো বেশি করে সময় কাটানোর কথাও বলেছেন তাঁরা।