‘ভয়’, নাকি নিজের প্রতি ‘আস্থা’? হঠাৎ নন্দীগ্রামে প্রার্থী কেন হলেন মমতা

‘ভয়’, নাকি নিজের প্রতি ‘আস্থা’? হঠাৎ নন্দীগ্রামে প্রার্থী কেন হলেন মমতা

 

কলকাতা: ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নন্দীগ্রামের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। শুধু বদল হল প্রার্থী নামের। সেবার প্রার্থী হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, এবার প্রার্থী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে নন্দীগ্রাম। মূলত শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করার পরেই নন্দীগ্রাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে নন্দীগ্রাম ইস্যুতে ভর করেই এবছর বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। সেই প্রেক্ষিতে নন্দীগ্রামের তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে ছিল। তবে আপাতত বিরাট ঘোষণা করে নন্দীগ্রামে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নিজেকেই সামনে আনলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। তবে হঠাৎ তিনি নিজে কেন নন্দীগ্রামের প্রার্থী হলেন, এই বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে একদিকে যেমন অস্তিত্বের লড়াই অন্যদিকে বিজেপির কাছে দখলের লড়াই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি বহু আগে থেকে শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। সেই প্রেক্ষিতে ছোট থেকে বড় এমন কোন ইস্যু নেই যা তারা ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে চলে আসায় কার্যত অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে বিজেপির কাছে বিশাল বড় অ্যাডভান্টেজ নন্দীগ্রাম ইস্যু। সেই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের ধারণা হতে পারে নন্দীগ্রাম এবং নন্দীগ্রামের মানুষের আস্থা অর্জন করতে তাদের অবশ্যই ভুল বুঝাবে বিজেপি। সেই প্রেক্ষিতে নন্দীগ্রামকে যে তৃণমূল কংগ্রেস গুরুত্ব দেয় তা প্রত্যক্ষ ভাবে বোঝানোর দরকার ছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, একদম এই কারণের জন্যই নিজের ভবানীপুর কেন্দ্রীয় ছেড়ে এখন নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিতে চাইছেন, নিজের গড় ছেড়ে দিয়ে তিনি নন্দীগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কারণ নন্দীগ্রাম তাঁর মনের অন্দরে রয়েছে। 

তবে বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশের মতে, এই সিদ্ধান্তের জন্য পরোক্ষভাবে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভয় পেয়েছে তা কার্যত সামনে চলে এল। কারণ, নন্দীগ্রাম ইস্যুকে বিজেপি যে প্রচন্ড গুরুত্ব দেবে তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণে তিনি নন্দীগ্রামে এমন একজন প্রার্থী দিতে চেয়েছেন যার হয়তো সেই পর্যায়ের ক্ষমতা থাকবে যে বিজেপি সেখানে দাঁত ফোটাতে না পারে। নারদা মামলার সময় বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হয়েছিল যে সব বিধানসভা আসন তিনিই প্রার্থী। অর্থাৎ দলের অন্য কোনো প্রার্থী বা নেতার ওপর ভরসা করতে পারেননি তিনি। এক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। নন্দীগ্রামের বিজেপির প্রার্থী হবেন শুভেন্দু অধিকারী এমন সম্ভাবনা দেখা গেলেও এখনও কিছু নিশ্চিত নয়। সেই প্রেক্ষিতে তৃণমূল যদি অন্য কোনো প্রার্থীকে দাঁড় করায় এবং নির্বাচনে হেরে যায় তাহলে বিরাট ধাক্কা খেতে হবে শাসক দলকে। সেই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের ওপরেই সব দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছেন। আবারও তাঁকে বলতে হচ্ছে, ২৯৪ টি ভাষণে তিনি প্রার্থী, তিনি লড়ছেন। তাই এক্ষেত্রেও যে তৃণমূল কংগ্রেস আপাতত ব্যাকফুটেই রয়েছে তা মনে করছেন অনেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + six =