কোভিশিল্ড নাকি কোভ্যাকসিন, কোনটি বেশি নিরাপদ? কি বলছে বিশেষজ্ঞরা?

কোভিশিল্ড নাকি কোভ্যাকসিন, কোনটি বেশি নিরাপদ? কি বলছে বিশেষজ্ঞরা?

কলকাতা: চিকিৎসাশাস্ত্রের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের সুবাদে অবশেষে ভারতবর্ষের হাতে এসে পৌঁছেছে দুটি করোনার টিকা। বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচির প্রথম পর্যায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে দেশব্যাপী। প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী সহ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা টিকা পেলেও পরবর্তী কিছু ধাপে সকলেই পাবেন এই টিকা, এমনটাই জানানো হয়েছে কেন্দ্র তরফে। এবার পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে এই টিকাকরণ নিয়ে ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন জল্পনার। এই টিকা নেওয়া কতটা নিরাপদ কিংবা এর সুফল কতটা? এই প্রশ্ন এখন দেশের কোণায় কোণায়।

বর্তমানে ভারতে যে দুটি টিকা কার্যকরী করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল- (১) অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ত্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, (২) আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)-এর গবেষণার মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ দেশীয় টিকা কোভ্যাকসিন।

(১) কোভিশিল্ড হল মূলত ভাইরাল ভেক্টর কেরিয়ার প্রোটিন ভ্যাকসিন, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির লাইভ এডিনো ভাইরাস, যা মানবদেহে বংশবৃদ্ধি করতে অক্ষম। আর এই টিকায় ভাইরাসের খোলকের মধ্যে রাখা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ‘স্পাইক প্রোটিন’, যা বাইরে থেকে আগত ভাইরাসকে কার্যকরী হতে বাধাপ্রদান করবে। ফলে মানবদেহে তৈরি হবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি।

(২) অন্যদিকে কোভ্যাকসিনে ব্যবহার করা হয়েছে নিষ্ক্রিয় করোনা ভাইরাস, যা মানবদেহে বংশবিস্তার করতে পারবে না, শুধু জীবাণুটিকে চিনে রাখবে, যা পরবর্তীকালে ইমিউনিটি সৃষ্টি করবে শরীরে।

তাহলে এই টিকাগুলি শরীরে কতটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহে ৬০-৭০% সুরক্ষা প্রদানে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা এও মনে করছেন যে যদি ১০০% মানুষকে টিকাপ্রদান করা যায় তাহলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুরক্ষার বলয়ে সুরক্ষিত থাকবে মানবজাতি। এবার ভিন্ন ভিন্ন টিকার ক্ষেত্রে ডোজের তারতম্য আরো বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাই এই জায়গাটা পরিষ্কার হওয়া ভীষণ জরুরি। প্রথমত, কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে দুটি ডোজ নেওয়া জরুরি, যেখানে প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার নিয়ম জানিয়েছে টিকা নির্মাণকারী সংস্থা। অন্যদিকে, কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইসিএমআর।

কিন্তু সবাই কি এই নিতে সক্ষম? এই বিষয়ে সরকারি তরফে বেশ কিছু মানুষদের টিকা নেওয়াতে বিধিনিষেধ প্রদান করা হয়েছে। যারা যারা টিকা নিতে পারবেন না তারা হলেন:- (১) এলার্জির সমস্যা থাকা ব্যক্তি বা মহিলা। (২) জ্বরে আক্রান্ত মানুষ। (৩) সন্তানসম্ভবা মহিলা। (৪) রক্তপাতজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষ। (৫) প্লাজমাথেরাপির অন্তর্গত কেউ। (৬) প্রাপ্তবয়স্ক নয় এমন কেউ।

কিন্তু এই টিকার মেয়াদ কতদিন থাকবে? এই বিষয়ে টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির মতামত অনুযায়ী মূলত একবছর স্থায়ী হবে এই টিকার কার্যকাল এবং তারপর পর্যবেক্ষণের পর বুস্টার ডোজের ব্যাপারে গবেষণা চালানো হবে। তবে টিকা নেওয়া মানেই ১০০% সুরক্ষা নয়। তাই সাধারণ মানুষকে সামাজিক নিয়মবিধি পালন এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 1 =