১৬ দিনের ব্যবধানে মন্ত্রী রাজীব-লক্ষ্মীর ইস্তফা, নেপথ্যে অরূপ-দ্বন্দ্ব?

১৬ দিনের ব্যবধানে মন্ত্রী রাজীব-লক্ষ্মীর ইস্তফা, নেপথ্যে অরূপ-দ্বন্দ্ব?

f4d8eb0e2edf0fe93ded87d7d8475503

কলকাতা: জল্পনা ছিল৷ এবার সেই জল্পনায় মাঝে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মন্ত্রিসভার ৫টি বৈঠকে গরহাজির থেকে এবার মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক৷ আজ দুপুরে রাজভবনে গিয়ে তিনি তাঁর পদত্যাগ জমা দেন৷ ইতিমধ্যেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন৷ নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করে নিয়েছেন রাজীব৷ জানিয়েছেন, তাঁকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যের মানুষকে পরিষেবা দিতে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ এর আগেও ঠিক একই ভাবে আচমকা মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও লক্ষ্মীরতন শুক্লা৷ এবার শুভেন্দুর-লক্ষ্মীর দেখানো পথেই আচমকা পদত্যাগ করলেন রাজীব৷ প্রায় ১ মাসের মধ্যে ২ মন্ত্রী ও ১ রাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন৷ 

কিন্তু, কেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন? পিছনে কি হাওড়া জেলায় বাড়তে থাকা অরূপ-দ্বন্দ্ব? রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরূপ রায় দ্বন্দ্বের চিত্র ইতিমধ্যেই সামনে চলে এসছে। তাহলে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও লক্ষ্মীরতন শুক্লার পদত্যাগে পিছনে অরূপ দ্বন্দ্ব কাজ করছে? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলে৷ যদিও, দলের অন্দরে দ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ তৃণমূলের হাওড়া সরদ জেলার চেয়ারম্যান অরূপ রায়৷ তাঁর সাফ জবাব, ‘‘আর কয়েকদিন পর নির্বাচন ঘোষণা হবে৷ এই সময়ে পদত্যাগ করা কোনও অর্থ হয় না৷ ১৯৯৮ সাল থেকে দলটা আমরা তৈরি করেছি৷ তখন পতাকা ধরার লোক ছিল না৷ এরা কেউ তখন ছিল না৷ এরা দেলের জন্য কতটা ত্যাগ করেছেন, সেই সমস্ত বিচার করা প্রয়োজন৷ সাধারণ মানুষ জানে কতটা কী করেছে৷ এইসব কথা বলে এখন আর কোনও লাভ নেই৷ দলে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে, বারবার হুমকি,  ব্ল্যাকমেইল করা, দলে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি৷ আর এরা দেখাবে দীশা? উনি কী দীশা দেখাবেন? নেত্রী আমাদের দীশা দেখান৷ সেই অনুযায়ী লাখ লাখ কর্মী কাজ করেন৷’’

এর আগে বেশ কিছু সপ্তাহ আগে হাওড়ার লেক ল্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে নিজের অনুগত নেতাদের নিয়ে সভা করেছিলেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। সেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক, প্রাক্তন মেয়র পরিষদ সদস্য এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না প্রাক্তন সদরের সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্লা। সেদিন হাওড়ায় পাল্টা চা চক্রের আয়োজন করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অনুগামীরা৷ ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও লক্ষ্মীরতন শুক্লা৷ বোসুরো বৈশালী বৈশালী ডালমিয়া৷   রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, হয়তো লক্ষ্মীরতন শুক্লা নিজের মতো কাজ করতে বাধা পাচ্ছিলেন, তাকে হয়তো নিজের মত অনুযায়ী কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না, সেই কারণেই এই সমস্ত দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন লক্ষ্মী৷ এবার একই পথে রাজীবও৷ যদিও রাজীব এর আগে দলের অন্দরে স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন৷ রাজীব-লক্ষ্মীর পর বৈশালীকে নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা৷

রাজীবের পদত্যাগ প্রসঙ্গে বৈশালী বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে হাওড়া জেলা থেকে একে একে সব দক্ষ প্রশাসক দল ছেড়ে দিচ্ছে। দলের বিমুখে যাচ্ছে। আবারও প্রমাণিত হল যে দলে উইপোকা রয়েছে, তারা আস্তে আস্তে দল শেষ করে দিচ্ছে। এদিন বৈশালী আবার তৃণমূল কংগ্রেস দলের একাংশের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, বলে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা অনেককে কাজ করতে বাধা দেয়, অকারণ জ্বালাতন করে। বৈশালীর কথায়, তিনি অনেক দিন ধরেই এই ব্যাপারে সরব হয়ে আসছেন কিন্তু বাকিরা হয়তো সেই ভাবে হতে পারেননি। এখন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে আরো একটি বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বৈশালী। দাবি করেন, প্রাক্তন কাউন্সিলর বা দলের কারুর বিরুদ্ধে যদি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে জনগণের অসুবিধা থাকলেও তাদের সুরক্ষিত করে রাখার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এই করে করে হাওড়া জেলাটাই পুরো নষ্ট হয়ে গেল বলে আক্ষেপ করছেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *