কলকাতা: সেই ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দেশের রাজধানী সরে গিয়েছিল দিল্লিতে৷ এবার নেতাজির জন্মজয়ন্তীর মতো দিনে দেশের চার শহরে চার রাজধানীর দাবি তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার মধ্যে একটি হোক কলকাতা৷ নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে মমতার এই দাবিতে অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘দিল্লিতে কী আছে? কেন একটা জায়গায় সংসদ সীমাবদ্ধ থাকবে?”
মমতার দাবি, ভারতের একটা রাজধানী কলকাতা হওয়া উচিত৷ এবং সেটি হওয়া উচিত এদিন সেটিও ব্যাখ্যা করেন মমতা৷ মমতার কথায়, ‘‘দেশের চার প্রান্তে রাজধানী হোক। তার মধ্যে একটা হোক কলকাতা।” শুধু রাজধানী নয়, সংসদের অধিবেশনও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চার শহরে করার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমরা সকলের জন্য বলছি। চার জায়গায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সংসদের অধিবেশন হোক। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ওয়ান লিডার, ওয়ান নেশনের মূল্য কী আছে?”
প্রসঙ্গত ভারতের পূর্বাঞ্চলের শহর কলকাতা। ১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল এটিই। অপরদিকে দিল্লির অবস্থান ভারতের উত্তরাঞ্চলে। তাই ব্রিটিশ সরকারের মনে হয়েছিল, দিল্লি থেকে ভারত শাসন করা অপেক্ষাকৃত সহজতর হবে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রস্তাব ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে রাখা হয়েছিল৷
ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে স্বভাবতই বঙ্গভঙ্গের বিষয়টি উঠে আসে। বঙ্গভঙ্গ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন এক পর্যায়ে এমন চরম রুপ নেয় যে, বোমাবাজি ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কলকাতার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়৷ কলকাতার আকাশ-বাতাস যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন লর্ড হার্ডিঞ্জ বেশ ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন কলকাতা আর তাদের জন্য শাসনকার্য পরিচালনার উপযোগী নয়৷ এরপর ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর নতুন রাজধানী হিসেবে নয়া দিল্লির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। তবে এর প্রায় ২০ বছর পর অবিভক্ত ভারতবর্ষের নতুন রাজধানী হিসেবে ১৯৩১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লি যাত্রা শুরু করে। নেতাজীর জন্মজয়ন্তির দিনে মমতার এই দাবি যে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দেশের রাজনীতিতে তা বলাই বাহুল্য৷