কলকাতা: কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করে সারসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দেশের কোথাও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী৷ অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর উচিত পদত্যাগ করা৷’’ কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরোধিতায় বিধানসভায় আনা প্রস্তাব ঘিরে তৈরি হয় তমুল হট্টোগোল৷ রাজ্যের তরফে প্রস্তাব পেশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তুমিল আপত্তি জানিয়ে অধিবেশন বয়কট করেন বিজেপি বিধায়করা৷ তুমুল বিতর্কের মধ্যে প্রাস্তাব পেশ ও আলোচনার পর পাস হয়ে যায় প্রস্তাব৷ বিধানসভায় ধ্বনি ভোটে পাস হলোরাজ্য সরকারের আনা কৃষি বিরোধী প্রস্তাব৷
আজ রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ প্রস্তাব ঘিরে বিধানসভায় তৈরি হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি৷ প্রায় হাতাহাতির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ বিধানসভার মধ্যো ওঠে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান৷ পরে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা৷ প্রস্তাব নিয়ে চলতে থাকে আলোচনা৷ পরে ধ্বনি ভোটে পাস হলোরাজ্য সরকারের আনা কৃষি বিরোধী প্রস্তাব৷ যদিও বাংলার আগে কেন্দ্রের আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, রাজস্থান, দিল্লি এবং কেরল সরকারি বিধানসভায় প্রাস পাস করিয়ে নিয়েছে৷ ফলে, সেই সমস্ত রাজ্যে আইন কার্যকর করা থেকে সুরক্ষা মিলতে পারে৷ কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইন মানবেন না, বিধানসভায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷
আজ অধিবেশনের শুরুতে বিল পেশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ জানান, কেন্দ্রের কালো কৃষি আইন কৃষকদের৷ দিল্লিতে কৃষকরা যে আন্দোলন করছেন সরকার তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিরোধিতা করেন বিজেপি বিধায়ক রামনোজ টিজ্ঞা, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, সুখবিলাসবর্মন৷ ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা৷ বিল পেশ হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি৷
উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী কৃষক বিরোধী আইনের তীব্র বিরোধতা করলেন৷ বিজেপি সরকার লঙ্কা কাণ্ডের মতো সারা দেশ জ্বালিয়ে খাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমনন্ত্রী৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার গায়ের জোরে এই কালো কৃষি আইন করেছে৷ আমি লজ্জিত, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের অপর যেভাবে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে আমি তার প্রতিবাদ জানাই৷ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর৷ কেন্দ্রের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সাধারণ মানুষযাতে চাল, গম, আলু ডাল পাবে না সেদিন বুঝেন। আগে কৃষকদের সামলান। পরে বাংলা সামলানোর কথা ভাববেন৷ বিধানসভার অন্দরে বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লুটের দল, দাঙ্গা বাজের দল বিধানসভা দখল করতে এসেছে৷ আমি লজ্জিত, কেন্দ্রিয় সরকারের কৃষকদের অপর যেভাবে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে আমি তার প্রতিবাদ জানাই৷ আজ আমরা সপথ নিচ্ছি, বাংলার মানুষ কৃষকদের পাশেছিলাম, আছি, থাকবো৷ পরপর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷ প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা৷ কর্পোরেট ঋণ মুকুব হলে কৃষকদের ঋণ মুকুব কেন করছে না কেন্দ্র সরকার? কৃষক সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে সর্বদল বৈঠক ডাকুক কেন্দ্র৷ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে তীব্র প্রতিবাদ জানায় বিজেপি বিধায়করা৷ কেন্দ্রের কৃষি আইন বিরোধি প্রস্তাব পাসের সুযোগ করে দিয়ে বিধানসভা ছাড়েন বিজেপির বিধায়করা৷ যদিও, তৃণমূল, বাম-কংগ্রেসের সমর্থনের খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি৷ সংখ্যা কম থাকায় পরে বিজেপি বিধানসভায় স্লোগান দিতে দিতে অধিবেশন বয়কট করে৷ বিজেপি শূন্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ আমলে নিল চাষের মতোই। শেই সময় চাষের ক্ষতি হলে দায় যেমন নিতেন না বর্তমান কেন্দ্রিয় সরকারের কৃষি আইন একই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ তিনটে কৃষক বিল বাতিলের আবেদন জানাচ্ছি। আপনাদের মতাদর্শে মিল নাও থাকতে পারে, আপনাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবেই লড়াই করি৷ কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যে কৃষকরা আন্দোলন করছে আমরা ভেদাভেদ না করে ওদের পাশে দাড়াই৷ বাম, কংগ্রেসের কাছে আবেদন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ আজ বিধানসভায় তিন কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আনা সরকারি প্রস্তাবের ওপর আলোচনার দিনে সভায় উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করে তৃণমূল কংগ্রেস তার বিধায়কদের উদ্দ্যেশ্যে হুইপ জারি করেছিল৷