জনতার ‘দুয়ারে’ গিয়ে করতে হবে দলের প্রচার, ভাষায় লাগাম দেওয়ার নির্দেশ নেত্রীর

জনতার ‘দুয়ারে’ গিয়ে করতে হবে দলের প্রচার, ভাষায় লাগাম দেওয়ার নির্দেশ নেত্রীর

কলকাতা: নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিদের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দিতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে, শুক্রবার দলের সাংগঠনিক বৈঠক এমনটাই নির্দেশ দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্য জনসভায় সাংসদ, বিধায়কদের বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 

রাজ্যে বহু প্রতীক্ষিত বিধানসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। সেই নিয়েই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি মহল। তৃণমূল-বিজেপি, দুই দলের মধ্যে সংঘাত চরমে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কালীঘাটে সাংগঠনিক বৈঠকে বসে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা সভাপতিরা। এই বৈঠকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশ দিলেন মমতা৷ 

তৃণমূল সূত্রের খবর, নির্বাচনী আচরনবিধি লাগু না হওয়া পর্যন্ত দলীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দলের হয়ে প্রচারে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ দলনেত্রীর আরও নির্দেশ, দলের ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সে কথা মাথায় রেখে কোনও বিতর্কিত মন্তব্যও করা যাবে না। পাশাপাশি, সংসদের বাজেট অধিবেশনে তৃণমূলে যোগ দিলেও নির্বাচনী প্রচারে জোর দেওয়ার জন্য এইবার অনেক কম সংখ্যক সদস্যকে দিল্লিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর তরফে। ১ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের মধ্যে দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস তার নির্বাচনী প্রচারের কর্মসূচি শুরু করবে বলে স্থির হয়েছে আজকের বৈঠকে।

এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ তথা বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়। তিনি জানান, বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বিধায়ক, এমএলএ এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ভোটের আগে কীভাবে দল কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে এদিনের বৈঠকে সে ব্যাপারেই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌগত রায়। সাংবাদিক বৈঠকে সৌগত রায় জানিয়েছেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ দিয়েই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করবে তৃণমূল৷ আসন্ন সংসদের বাজেট অধিবেশনে তৃণমূল যোগ দিলেও, উপস্থিত থাকবেন কম সংখ্যক সংসদ সদস্য৷ কারণ বাকিরা রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারেই ব্যস্ত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

বৈঠক শেষে সম্প্রতি কৃষক আন্দোলন নিয়ে দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে এক হাত নিয়েছেন সৌগত বাবু। সংসদীয় বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে আজ রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার সূত্র ধরে বহু রাজনৈতিক দলই সেই ভাষণ বয়কট করেছে। এদিন সে প্রসঙ্গ টেনে সৌগত রায় জানিয়েছেন, “রাষ্ট্রপতির এটা মনে রাখা উচিত ছিল কৃষকদের ইস্যু সবচেয়ে জরুরি। ভারতের কৃষকরা সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। কিন্তু সরকার এখনও যে অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি।” বিজেপি কৃষক আন্দোলনের গতিরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিলকে কেন্দ্র করে যে অশান্তির সাক্ষী থেকেছে রাজধানী বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই তাতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, বলেন সৌগত রায়। তাঁর কথায়, “আমাদের দল প্রথম দিন থেকেই কৃষকদের পক্ষে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।” এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিধানসভায় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেছে বলেও স্মরণ করিয়েছেন সৌগত রায়। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ করা হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি বাজেট নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে তা পাশ হবে। এই দুদিনই শাসকদলের সমস্ত বিধায়কদের বিধানসভায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *