ওয়াশিংটন: মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি করল নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)-র তৈরি সোলার অরবিটার৷ গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সৌর পাড়ায় তার বাস৷ কিন্তু সৌর পরিবারের কর্তার এতটা কাছাকাছি এই প্রথম পৌঁছতে পারল সে৷ পাঠাল সূর্যের সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা একাধিক ক্লোজআপ ছবি৷ সর্বসাধারণের জন্য সেই ছবি দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে নাসা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি নাসা এবং ইএসএ-র যৌথ উদ্যোগে ইউরোপীয় সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে রকেটে চাপিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের দেশে পাঠানো হয় সবচেয়ে বড় সোলার মেশিন সোলার অরবিটারকে। তার বাহক ছিল উনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স অ্যাটলাস ভি রকেট৷ সৌর পাড়ায় প্রবেশের পরই কয়েকটি অ্যান্টেনা স্থাপন করে সে৷ সোলার অরবিটার একটি অনন্য কক্ষপথে রয়েছে৷ এই কক্ষপথে সূর্যের কাছাকাছি মোট ২২টি অবস্থান পড়বে। কক্ষপথে ঢুকেই সূর্যের ছবি তুলে পাঠাতে শুরু করে সোলার অরবিটার৷ তবে ১৬ জুলাই ছিল সেই মহেন্দ্রক্ষণ, যখন সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে আসে সে৷
উৎক্ষেপণের সময়ই বলা হয়েছিল, এই প্রথম মহাকাশ থেকে সূর্যের মেরুগুলির ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে পারবে কোনও মহাকাশযান। উৎক্ষেপণের পরের দিন জার্মানির ডারমস্টাডেটের ইউরোপীয় স্পেস অপারেশনস সেন্টারের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান থেকে একটি সঙ্কেত পান৷ এই সঙ্কেত পাওয়ার পরই তাঁরা নিশ্চিত হন সোলার অরবিটারের সৌর প্যানেলগুলি সফল ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টের নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে কর্মরত বিজ্ঞানী হোলি গিলবার্ট বলেন, ‘‘সূর্যের এত কাছ থেকে তোলা অভূতপূর্ব ছবি এর আগে কখনও পাইনি৷’’ নাসা জানিয়েছে, এই ক্লোজআপ ছবিগুলি সূর্যের বায়ুমণ্ডলীয় স্তরগুলি সম্পর্কে আরও বেশি ভাবে জানতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে৷ পৃথিবীর কাছাকাছি এবং সৌরজগতে মহাকাশ আবহাওয়া কী ভাবে চালিত হয়, তা বোঝার জন্যও এই ছবিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
নাসার বিজ্ঞানীদের কথায়, ‘‘এত তাড়াতাড়ি এত ভালো ফল পাব আমরা আশা করিনি৷’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, এই পর্যায়ে পৌঁছনো সহজ ছিল না৷ করোনা সংক্রমণের জেরে জার্মানির ডার্মস্টাডে ইউরোপিয়ান স্পেস অপারেশনস সেন্টারে এক সপ্তাহের উপর কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল৷
সোলার অরবিটারে রয়েছে থ্রি-অ্যাক্সিস স্টেবিলাইজড প্ল্যাটফর্ম। সূর্যের আগুনের তেজ সইবার জন্য বিশেষ রকমের হিট-শিল্ড। রয়েছে ছ’টি ইমেজিং যন্ত্র৷ যার প্রত্যেকটি সূর্যের বিভিন্ন দিকগুলি তুলে ধরবে৷ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সোলার অরবিটারের এক্সট্রিম আলট্রাভায়োলেট ইমেজার (ইইফআই) সূর্যের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিত পাঠিয়েছে যা আগে কখনও দেখা যায়নি৷ এছাড়াও পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য লো-গ্রেড অ্যান্টেনা ও হাই-টেম্পারেটার হাই-গেন অ্যান্টেনা রয়েছে সোলার অরবিটারে৷