বিশ্ব উষ্ণায়ন! গলে গেল সুমেরুর বিশাল বরফের চাঁই, ধরা পড়ল নাসার উপগ্রহ চিত্রে

২০১৭ সালে অভিজ্ঞ মার্ক এক গবেষণায় জানান, আর হয়তো পাঁচ বছর আয়ু ওই বরফের চাঁই দুটির। পাঁচ বছর হতে না হতেই সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। 

 

কানাডা: তখন ১৯৮২ সাল। সদ্য স্নাতক মার্ক সেরেজ উত্তর মেরুর কাছে সেন্ট প্যাট্রিক উপসাগরে গবেষণার কাজে গিয়েছিলেন। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ গবেষক রে ব্র্যাডলির অধীনে সেই অভিযানে গিয়ে মার্ক দুটি বড় বড় আইস ক্যাপস দেখেছিলেন। বিরাট এলাকা জুড়ে সমুদ্রে ভাসমান বরফের চাঁইকেই বলা হয় আইস ক্যাপস। ওই দুটিকে দেখে তরুণ মার্কের মনে হয়েছিল এগুলো হয়তো অনন্তকাল ধরে এভাবেই অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু মানুষের উৎপাতে তা হওয়ার নয়। ২০১৭ সালে অভিজ্ঞ মার্ক এক গবেষণায় জানান, আর হয়তো পাঁচ বছর আয়ু ওই বরফের চাঁই দুটির। পাঁচ বছর হতে না হতেই সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। 
 

এনএসআইডিসি-র গবেষক মার্ক সেরেজ। 

 

সম্প্রতি নাসার এক উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গেছে, সেন্ট প্যাট্রিক উপসাগরের ওই বিশালাকার বরফ খণ্ড দুটি উধাও হয়ে গেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সম্পূর্ণ গলে গেছে তারা। এ ঘটনায় স্পষ্টতই কষ্ট পেয়েছেন মার্ক। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি যখন ও দুটোকে প্রথম দেখি তখন মনে হয়ে ছিল যেন চিরস্থায়ী দৃশ্য। কিন্তু ৪০ বছরেরও কম সময়ে তাদের মরতে দেখে খুবই বিধ্বস্ত লাগছে।’ ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের (এনএসআইডিসি) তরফে বিভিন্ন দশকে তোলা সেন্ট প্যাট্রিক উপসাগরের উপগ্রহ চিত্র দেখে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। ১৯৫৯ সালের ছবির সঙ্গে ২০১৫ সালের ছবি তুলনা করে দেখে তাঁরা জানান, আগের মাত্র পাঁচ শতাংশ আকার রয়ে গেছে বরফ খণ্ড দুটির।

সেন্ট প্যাট্রিক উপসাগর হেজেন মালভূমিতে অবস্থিত। এই এলাকায় এরকম প্রচুর বরফখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, বহু বহু বছর আগের ‘আইস এজ’ বা হিমযুগের সময়ে গঠিত হয়েছিল এই খণ্ডগুলি। মানুষের নির্বুদ্ধিতা এবং স্বার্থের ফলেই আজ বিশ্ব উষ্ণায়নের এমন প্রকোপ। সেই প্রকোপে ধীরে ধীরে মেরুপ্রদেশের বরফ গলে চলেছে। হেজেন মালভূমির তুলনামূলক উঁচু এলাকায় অবস্থিত বরফ এখনও গলেনি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সেগুলোর আয়ুও আর বেশিদিন থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − sixteen =