মস্কো: প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ থামেনি। অধিকাংশ মানুষ ভেবেছিলেন রাশিয়ার আক্রমণে কিছুদিনের মধ্যেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে ইউক্রেন। কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিভ-সহ সমস্ত প্রদেশ দখল করে নেবে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী, এমনটাই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। তুল্যমূল্য প্রতিরোধ করে চলেছে ইউক্রেন। আর তাতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার বাহিনীকে পথে নামিয়েছিলেন। কুখ্যাত ওয়াগনার বাহিনী এর আগে বিভিন্ন দেশে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে। তাই ইউক্রেন দখল করতে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে আসরে নামিয়েছিলেন পুতিন। আর সেটাই কাল হল।
বিভিন্ন ইস্যুতে পুতিনের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রাশিয়ার একাধিক প্রদেশ দখল করার চেষ্টায় নামে ওয়াগনার বাহিনী। শুধু তাই নয়, রীতিমতো পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মস্কো দখল করে নেওয়ার ডাক দেয় তারা। সেই সময় পুতিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে প্রিগোজিনকে বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ঘটনা হল পুতিনের মদতেই তো আজ ওয়াগনার বাহিনীর এত বাড়বাড়ন্ত। এই বাহিনী রুশ সেনার অংশ নয়। এই বাহিনী পুতিনের একেবারেই নিজস্ব। তা সত্ত্বেও তাদের কেন ইউক্রেন দখলের লক্ষ্যে পাঠানো হল, সে প্রশ্ন আগেই উঠেছিল।
বিষয়টি নিয়ে প্রিগোজিনের অভিযোগ, ইচ্ছা করে তাঁদের যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন পুতিন। এরপরই মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরে ওয়াগনার বাহিনী। তাতে রীতিমতো রাতের ঘুম ছুটে যায় পুতিনের। কিছুদিন আগেও পুতিনের ইশারাতেই ওঠাবসা করত ওয়াগনার বাহিনী। কিন্তু সময় বদলেছে। তাই পুতিনের অস্ত্র আজ ব্যুমেরাং হয়ে তাঁর দিকেই ছুটে গিয়েছে। তবে মস্কো তথা রাশিয়াকে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে পুতিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একই ভাবে প্রিগোজিনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের। তাই পুতিন আর এক মুহূর্ত না ভেবে লুকাশেঙ্কোকে ফোন করে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে বলার পরেই সমস্যা মেটে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট এ যাত্রায় নিরস্ত করেছেন প্রিগোজিনকে।
তাই দেখা যাচ্ছে সুপার পাওয়ার দেশ রাশিয়াও পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে কতটা দিশাহারা অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ও রাশিয়া বিশ্বের সবচাইতে বড় শক্তিধর দেশ হিসেবেই পরিচিত। সেখানে ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার বাহিনীর হুঁশিয়ারিতে এতটা বিপন্ন বোধ কেন করলেন পুতিন, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। আসলে পুতিন ভালভাবেই জানেন ওয়াগনার বাহিনীর সঙ্গে রুশ সেনার যুদ্ধ হলে হাজার হাজার রাশিয়াবাসী প্রাণ হারাবেন। তাতে ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়বেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
দেশকে তিনি কেন এত বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন, এই প্রশ্ন উঠে যাবে। এমনিতেই রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে তা সেই দেশের মানুষের একটা বড় অংশ ভালভাবে নেননি। রাস্তায় নেমে পুতিনের বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সেই অংশ। তাই ওয়াগনার বাহিনীর আক্রমণের হুঁশিয়ারিতে পুতিন যে বিপন্ন বোধ করবেন, এটাই স্বাভাবিক।