গোয়ালপোখর: অবশেষে রাজ্যে ভোট প্রচারের এলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ একযোগে আক্রমণ শানলেন নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে৷ এতদিন বিজেপি’র তাবড় তাবড় নেতারা বঙ্গে এলেও প্রচারে আসেননি রাহুল৷ তবে কেরলে ভোট মিটতেই এবার বাংলায় ঝাঁপালেন তিনি৷
আরও পড়ুন- করোনা বাড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যাবে! সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য মমতা দুষলেন মোদী-শাহকে
এদিন রাহুল বলেন, যে বিচার ধারা বিজেপি বাংলায় আনতে চাইছে, তাতে আক্রান্ত হবে বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার ইতিহাস৷ ঘৃণা আর হিংসা ছাড়া বিজেপি’ আর কিছুই জানে না৷ তাঁর কথায়, বিজেপি বাংলাকে দু’টুকরো করে দিতে চায়৷ এখানকার মানুষের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব বোধ রয়েছে, তা খতম করতে চায়৷ যার ফল হবে ভয়ঙ্কর হবে৷ আগুন জ্বলবে এখানে৷ নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের গায়ে সেই আঁচ লাগবে না৷ কারণ উনি দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ ওঁনার দেহরক্ষী রয়েছে, নিরাপত্তাবলয়ে উনি আবদ্ধ৷ এই আগুনে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বা ওঁনার ছেলে দগ্ধ হবে না৷ জ্বলবে বাংলা৷ চোখের জলে ভাসবে মা-বোনেরা৷ তাই এখানে আমরা শুধু ভোটে লড়ছি না, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভবিষ্যতের রক্ষা করছি৷
বিজেপি’র বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাহুল আরও বলেন, বিজেপে উত্তর প্রদেশে আগুন জ্বালিয়ে ভোটে জিতেছে৷ আর এখন উত্তরপ্রদেশে গিয়ে দেখুন কী হাল৷ মানুষ করোনায় মরছে৷ হাসপাতাল মৃতদেহে ভর্তি৷ বেকারদের চাকরি নেই৷ একদিন রাত ৮টার সময় প্রধানমন্ত্রী টিভিতে এসে বললেন, আমার ৫০০-১০০০ টাকা নোট পছন্দ হয়নি, তাই বাতিল করে দিলাম৷ সকলকে বলা হল ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে৷ কিন্তু আপনারা মোদীজিকে লাইনে দাঁড়াতে দেখেছেন কি? লাখো টাকার স্যুট পরেন উনি৷ এই টাকা কোখা থেকে আসে? এর পর জিএসটি লাগু করলেন৷ ২৮ শতাংশ কর চাপানো হল৷ এখনও পর্যন্ত ছোট দোকানদারেরা জিএসটি কী, সেটাই বুঝতে পারেননি। নোটবন্দি করে কারও ফায়দা হয়নি। নোটবন্দী থেকে কোনও গরিব মানুষ উপকৃত হয়নি৷ উপকৃত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর পাঁচ-দশ জন বন্ধু৷ সমস্ত কর তাঁদের কাছেই যায়৷
এদিন মমতাকেও একহাত নেন রাহুল৷ তিনি বলেন, মোজীজি বা মমতা দিদি, কেউই আপনাদের কাজ দেয়নি৷ তাই কাজের সন্ধানে আপনাদের বাইরে যেতে হয়৷ আর যেটুকু কাজ পান তার জন্য আগে পয়সা দিতে হয়৷ কাটমানি৷ বাংলা প্রথম রাজ্য, যেখানে রোজগারের জন্য আগে ডিপোজিট করতে হয়৷ এর পরেও কাজ মিলবে কিনা নিশ্চয়তা নেই৷ মমতা দিদি বলেন, ভোটের সময় খেলা হবে৷ কেমন খেলা? খেলতে গেলে রাস্তা লাগবে৷ এখানে রাস্তা কে তৈরি করবে? কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কে বানাবে? খেলতে গেলে সেখানকার মাঠ লাগবে৷
তাঁর কথায়, দেখে এখন নাটক চলছে৷ একদিকে করোনার সময় মোদী বলেন থালা বাজাও, ঘণ্টা বাজাও, মোবাইল ফোনের লাইট অন করে ঘরে অন্ধকার করে দাও৷ এতে কি করোনা পালিয়ে গিয়েছে? মোদী’জি কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই লকডাউন করেন।
আরও পড়ুন- বাংলা ভাগ করার চেষ্টা! মোদী-মমতাকে নিশানা রাহুলের
আচমকা লকডাউন করায় শ্রমিকদের ভুগতে হয়েছে৷ শ্রমিকেরা হাতজোড় করে বলেছিল আমরা ঘরে যেতে চাই। আর সোনার বাংলাওয়ালারা বলেন, তোমারা না খেয়ে পেয়ে মরে যাও। বরং নিজের ৫-১০ বন্ধুর কর মাফ করে দিলেন তিনি।
তাঁর কথায়, এটা মতাদর্শের লড়াই। ভাবাদর্শের লড়াই। নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের কথা বলেন। উনি তৃণমূল-মুক্ত ভারতের কথা বলেননি। কারণ মোদীজি এটা ভালোই জানেন, রাহুল গান্ধী তাঁকে ভয় পান না। উল্টে রাহুল গান্ধীকেই ভয় পান নরেন্দ্র মোদী।