১৩১ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের লড়াকু জীবন

১৩১ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের লড়াকু জীবন

নয়াদিল্লি:  আজ ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের ১৩১ তম জন্মজয়ন্তী৷ যিনি বাবা সহেব নামেও পরিচিত৷ যাঁর সারা জীবন অতিবাহিত হয়েছিল অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে৷ কিন্তু তাঁর এত লড়াইয়ের পরেও কি জাতপাতের কাঁটাতার ছিঁড়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে দেশ? কিছুটা হলেও, হয়তো এখনও সব ছুঁৎমার্গ কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা৷ তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই হয়তো একদিন সমস্ত কিছুর উর্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবে ভারত৷ 

আরও পড়ুন- করোনাভাইরাস আক্রান্ত যোগী এবং অখিলেশ! সেলফ আইসোলেশনে দুজনেই

বাবা সাহেব ছিলেন একজন জ্যুরিস্ট, রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, সুবক্তা, নৃতত্ত্ববিদ, অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট লেখক ও রাষ্ট্রবিপ্লবী৷ তিনি গরিব “মহর”  পরিবারের সন্তান৷ সেই সময় মহর জাতি অস্পৃশ্য হিসেবেই গণ্য হত৷  আম্বেদকর সারাজীবন সামাজিক বৈষম্যের  ও  অস্পৃশ্যতা বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন৷ পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং হাজারো অস্পৃশ্যদের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মে  রূপান্তরিত করেছিলেন৷ স্ফুলিঙ্গের মতো এই কাজ করেছিলেন তিনি৷ 

আম্বেদকরের জন্ম হয়েছিল বর্তমান মধ্যপ্রদেশের মোহ অঞ্চলে ব্রিটিশ কর্তৃক স্থাপিত শহরে ৷ তাঁর বাবা ছিলেন রামজী মালোজী শাকপাল এবং তাঁর মা ছিলেন ভীমাবাই৷ বাবাসাহেব ছিলেন তাঁদের ১৪ তম তথা কনিষ্ঠ সন্তান৷ তাঁর পরিবার ছিল মারাঠী অধ্যুষিত বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার আম্বোভাদ শহরে বাসিন্দা। তাঁরা অস্পৃশ্য মহর জাতির সদস্য হওয়ায় প্রচণ্ড আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার হতে হত। আম্বেদকরের বাবা রামজী শাকপাল ভারতীয় সেনা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন মোহ সেনানিবাসে৷  

প্রচণ্ড লড়াই করেই তিনি সেই সময় মারাঠি ও ইংরেজিতে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন৷ যদিও স্কুলে অন্যান্য অস্পৃশ্য শিশুর মতো তাঁকেও বৈষম্যের শিকার হতে হত৷ শিক্ষকরা তাঁদের প্রতি ছিলেন উদাসীন৷ কোনও ভাবেই সহযোগিতা করতেন না৷ এমনকী তাঁদের ক্লাসের মধ্যে বসার অনুমতিও ছিল না৷ জল তেষ্টা পেলে উঁচু জাতের কোনও চাপরাসী উঁচু থেকে তাঁদের হাতে জল ঢেলে দিত৷ যাতে দলের পাত্র স্পর্শ না হয়৷ তিনি না এলে, সারা দিন জল না খেয়েই থাকতে হত৷  

১৯৮৪ সালে রামজী শাকপাল অবসর নেওয়ার ২ বছর পর তাঁর পরিবার সাতারা চলে আসে৷ এর পরেই তিনি তাঁর মাকে হারান৷ মাসির কাছে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠেন আম্বেদকরের ভাইবোনেরা৷ অন্যান্য ভাইবোনেদের মধ্যে একমাত্র আম্বেদকরই কলেজের স্নাতক ডিগ্রি লাভে সক্ষম হন।  আম্বেদকরই প্রথম ভারতীয় যিনি বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের প্রথম পিএইচডি ডিগ্রিধারী৷ দুবার তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আম্বেদকর ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ১০০ পণ্ডিতের মধ্যে আম্বেদকর হলেন অন্যতম। বাবাসাহেব সমগ্র বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে সমস্ত বিজ্ঞান বিষয়ের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

আরও পড়ুন- হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

১৯০৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ তার পর তাঁরা চলে আসেন মুম্বই৷ তিনি ছিলেন এলফিন্‌স্টোন-এর সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম অস্পৃশ্য ছাত্র৷ ১৯০৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম অস্পৃশ্য ছাত্র হিসেবে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন৷ ১৯৩৫ সালে মুম্বইয়ের সরকারি আইন কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন৷ ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্বনির্ভর শ্রমিক দল৷ যা এর পরের বছর বিধানসভা নির্বাচনে ১৫টি আসনে জয়ী হয়৷ ১৯৪৮ সাল থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তিনি৷ পরে তিনি দৃষ্টিশক্তিও হারান৷ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন৷ ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতমাতার এই লড়াকু সন্তানের মৃত্যু হয়৷ ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি.ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটে ‘শ্রেষ্ঠ ভারতীয়’ নির্বাচিত হন আম্বেদকর।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 5 =