কলকাতা: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। গত তিন-চার মাসে ঝড়ের বেগে বিরোধী হাওয়া তুলেও প্রতিদ্বন্দিতায় ধারেকাছেও এলো না ভারতীয় জনতা পার্টি। রবিবার ভোট গণনা যখন শেষের পথে তখন হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ। বাংলার মানুষের রায়কে মাথা পেতে মেনে নিয়ে তিনি জানালেন, “আমরা আমাদের সমগ্র শক্তি দিয়ে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু হয়তো বাংলার মানুষের কাছে আমরা সঠিকভাবে বার্তা পৌঁছে দিতে পারিনি। তাই আমাদের এই হার দেখতে হল। বাংলার মানুষ যে রায় দিয়েছেন সেই রায় আমরা মাথা পেতে গ্রহণ করছি। এবারে সংঘর্ষের বদলে সহযোগিতার রাজনীতি হোক।”
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১১টি আসনে জিতে সরকার গঠন করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের মার্কশিটে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে সেই রেকর্ডকেও ভেঙে দিতে পারে তৃণমূল। শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে প্রায় ২১৫টি আসনে। তৃণমূলের এই বিপুল জয় নিয়ে কী বললেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ? রবিবার বিকেলে ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে জয়প্রকাশবাবু জানালেন, “সিপিআইএম ও জাতীয় কংগ্রেস জোট করেছিল এই নির্বাচনে। সঙ্গী ছিল নতুন তৈরি হওয়া দল আইএসএফ। এই সংযুক্ত মোর্চা বারবার করে প্রচারে গিয়ে বিজেপিকে একটিও ভোট না দেওয়ার কথা বলেছিল। এই বাম-কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্ক তাই বিজেপিকে একটিও ভোট না দিয়ে সিপিএম-কংগ্রেসকেও কোনও ভোট না দিয়ে সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। বাম-কংগ্রেসের এই বিরাট ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের দিকে চলে যাওয়াতেই তারা ঐতিহাসিকভাবে জয়লাভ করেছে।”
বাংলা বিধানসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ কেন্দ্র নন্দীগ্রামে একেবারে স্বল্প ভোটে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে জয়প্রকাশ নারায়ণ জানিয়েছেন, “সকাল থেকে ভোটের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ রাউন্ডে গিয়ে তিনি খুব অল্প ভোটের মার্জিনে জয়লাভ করেছেন। এই জয়ের জন্য তাকে অনেক অভিনন্দন। তার বিরুদ্ধে ছিলেন বিজেপির বড় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেওয়ার জন্য তাকেও অনেক অভিনন্দন জানাই।”
এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আসতে চলেছে বিজেপি। এ বিষয়ে জয়প্রকাশবাবুর মত, “সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বাংলার বিধানসভায় আসতে চলেছে বিজেপি। আমরা কথা দিচ্ছি, একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে ভারতীয় জনতা পার্টি। একটা বিষয় এই নির্বাচনে নিশ্চিত হয়ে গেল। বাম ও কংগ্রেসের মতো শক্তিশালী দল এই নির্বাচনের পর বাংলা থেকে কার্যত ভ্যানিশ হয়ে গেল। তাদের আর কোনও অস্তিত্ব রইল না।” তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে সরকার গড়ার পথে তৃণমূল। এই নিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জয়প্রকাশ।