দর্শনের ছাত্রী হয়ে উঠেছিলেন শ্রমিক নেতা! ভাঙড়ের হৃদয় ভেঙে প্রয়াত রেড স্টার নেত্রী শর্মিষ্ঠা!

দর্শনের ছাত্রী হয়ে উঠেছিলেন শ্রমিক নেতা! ভাঙড়ের হৃদয় ভেঙে প্রয়াত রেড স্টার নেত্রী শর্মিষ্ঠা!

কলকাতা: জুটমিলের শ্রমিকদের হয়ে লড়াই থেকে জমি আন্দোলন, সবেতেই নাম জড়িয়ে আছে শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর৷ সিপিআই (এমএল)-এর রেড স্টারের নেত্রী তিনি। ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন শর্মিষ্ঠা। জেলেও যেতে হয় তাঁকে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক শর্মিষ্ঠা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনে নিজেকে পুরোপুরি জড়িয়ে ফেলার আগে শর্মিষ্ঠা একটি ইংরাজি দৈনিকে সাংবাদিকতা করতেন। সংগঠনের পূর্ণ সময়ের কর্মী হয়ে ওঠার জন্য মোটা বেতনের চাকরি ছাড়েন তিনি৷ এরপরেই শুরু আর্ত মানুষের হয়ে লড়াই৷
 
ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে শর্মিষ্ঠার ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। শর্মিষ্ঠার স্বামী অলিক চক্রবর্তী ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। জমি, জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির তরফ থেকে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড গড়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয় রাজ্য সরকারকে। শুরুতে আন্দোলন প্রতিহত করতে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার। পুলিশের উপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সহ একাধিক ধারায় শর্মিষ্ঠাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। গ্রেফতার করা হয় শর্মিষ্ঠার সহযোগী বেশ কয়েকজনকেও। একই অভিযোগ আনা হয় তাঁর স্বামী অলিক চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও। দিকে দিকে শুরু হয় গণআন্দোলন। ভাঙড়ের গ্রামে গ্রামে চলে বিক্ষোভ। ছ’মাস জেলে কারানোর পর কলকাতা হাইকোর্ট ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত শর্মিষ্ঠার জামিন মঞ্জুর করে। লড়াইয়ের মাঠে ফেরেন নেত্রী। শর্মিষ্ঠার নেতৃত্বে পঞ্চায়তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জমি, জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। মনোয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করেও আদালতে ছুটতে হয় তাঁকে।
 
শেষদিকে, পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকারীদের সব অধিকাংশ দাবি মেনে নেয় সরকার। ক্ষতিপূরণ, গ্রামে হিমঘর তৈরি সহ একাধিক দাবিতে সিলমোহর দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে। পরবর্তীতে লকডাউনে শ্রমিকদের ন্যায্য বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শর্মিষ্ঠা। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি৷ দীর্ঘদিন ইন্টেস্টাইনের সমস্যায় ভোগা এই বাম নেত্রী করোনায় আক্রান্ত হন মাসখানেক আগে। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নানান জটিলতা তৈরি হয়৷ মাত্র ৪৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন শর্মিষ্ঠা চৌধুরী৷ সোমবার এসএসকেএম থেকে দেহ শহরের কোন একটি মেডিক্যাল কলেজকে দান করা হবে বলে জানা গিয়েছে৷ শর্মিষ্ঠার দেহ নিয়ে গবেষণা হবে, হইতো বা খুলে যাবে চিকিৎসা বিজ্ঞাপনের নতুন দিগন্ত৷ কিন্তু, ভাঙড়ে আর ফিরবেন না ‘শর্মিষ্ঠা দি’! আর লড়বেন না খেটে খাওয়া মানুষের হকের দাবিতে৷ কিন্তু, তাঁকে মনে রাখবেন সেই জুটমিলের শ্রমিকরা, শূন্যতা অনুভর করবে ভাঙড়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 5 =