নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রসংঘে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেল ভারত। ভারতের তরফে এই পদে এক বঙ্গতনয়া বিদিশা মৈত্রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রশাসনিক এবং বাজেট সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণকারী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই কমিটির নাম অ্যাডভাইসরি কমিটি অন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড বাজেটরি কোয়েশ্চেন্সের (এসিএবিকিউ)।
রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা বা জেনারেল অ্যাসেম্বলির অধীনে রয়েছে এসিএবিকিউ। সাধারণ সভার সদস্য ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিরা এই উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করেন। বিদিশার ক্ষেত্রেও এভাবেই এগোনো হয়েছিল। সাধারণত এই কমিটিতে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব, ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে সদস্যদের নির্বাচন করা হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলির থেকে এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন বিদিশা। তিনি ১২৬টি ভোট পেয়ে জয়ী গন। তাঁর প্রতিযোগী ছিলেন ইরাকের কূটনীতিক আলি মহম্মদ ফায়েক আল-দাবাগ। তিনি ৬৪টি ভোট পেয়েছেন। ২০২১-এর পয়লা জানুয়ারি থেকে তিন বছরের মেয়াদে এই কমিটির সদস্য রূপে কাজ শুরু করবেন বিদিশা। এরপর থেকে রাষ্ট্রসংঘের যাবতীয় আর্থিক কাজের ক্ষেত্রে যে বাজেট বরাদ্দ হবে ও অডিট হবে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ভারতের সম্মতি প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।
বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিদিশা সর্বকনিষ্ঠ। ২০০৮ ব্যাচের ফার্স্ট অফিসার ছিলেন বিদিশা। রাষ্ট্রসংঘে তিনি ভারতের স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি। এর পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের সামনে ভারতের তরফে কী কী ইস্যু তুলে ধরা হবে, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অনেকাংশে বিদিশার। প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বরে মাসে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তখন ভারতের হয়ে পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন এই বিদিশাই। দিল্লির এই বাঙালি কন্যার বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। তাঁর বাবা ইলাহাবাদের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে দিল্লি থাকতেন। তিনিও বিদেশ মন্ত্রকে চাকরি করতেন। বিদিশার রাজস্ব বিভাগে আইআরএস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পান। ২০০৭ সালে মুসৌরি থেকে ট্রেনিং নেন। সেখানেই বিদেশ মন্ত্রকের অফিসার মায়াঙ্কের সঙ্গে পরিচয়, বন্ধুত্ব ও পরে বিয়ে। এরপরে বিদিশা আইএফএস পরীক্ষায় বসেন।
বিদিশার এই জয় ভারতের ক্ষেত্রে বড় প্রাপ্তি। বিদিশার পদ এলাকাভিত্তিক। দক্ষিণ এশিয়া থেকে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। বোঝাই যায় ভারতের প্রতি সব দেশের সমর্থন রয়েছে। আগামী বছর থেকে মোট তিন বছর রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে বসছে ভারত। তার আগে বিদিশার এই জয় কৃটনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী দূত টি এস তিরুমূর্তি বলেন, ভারতের প্রতি রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলির সমর্থন বিদিশার নির্বাচনে প্রমাণিত। বিদিশাকে সমর্থনের জন্য রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলিকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিরুমূর্তি।