বাঁকুড়া: স্বামী বিবেকানন্দের চোখে মা সারদা ছিলেন ‘জ্যান্ত দুর্গা।
সেটা ১৯২০ সালে ২০ জুলাই৷ জগজ্জননী মা সারদার মহাপ্রয়াণের পর ১৯২৩ সালে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বেলুড় মঠের মহারাজ, রামকৃষ্ণদেবের সন্যাসী সন্তান স্বামী সারদানন্দজীর উদ্যোগে মা সারদার দু’টি বাড়িকেই অক্ষত রেখে তাঁর জন্মস্থান জয়রামবাটিতে ‘মাতৃমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই ‘মাতৃমন্দিরে’র উদ্যোগেই ১৯২৫ সালে প্রথম ঘটে পটে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সূচণা হয়। পরে ১৯৩২ সালে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু হয়। তখন থেকে সেই প্রথা আজও চলে আসছে।
জয়রামবাটি ‘মাতৃ মন্দিরে’র পূজার মূল আকর্ষণ মহাষ্টমীর দিন কুমারী পূজা। মা সারদার পবিত্র জন্মভূমিতে বছরভর দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে পুজোর দিনগুলোতে সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৮৫৩ সালের ২২ শে ডিসেম্বর বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন মা সারদা। তৎকালীন সময়ের রীতি অনুযায়ী মাত্র ৯ বছর বয়সেই পার্শ্ববর্তী হুগলী জেলার কামারপুকুরের বাসিন্দা গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের (পরবর্তী সময়ে যিনি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নামে পরিচিত হন) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত সারদাদেবী জয়রামবাটির খড়ের চালার মাটির বাড়িতেই ছিলেন। সেখানে বসেই তাঁর সন্তানসম শিষ্যদের গল্পের ছলে নানান উপদেশ দিতেন।
তবে ব্রাহ্মন পরিবারে জন্ম নিলেও তাঁর বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল চণ্ডাল থেকে শুদ্র সব শ্রেণির মানুষের। ১৯১৬ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর পুরাতন বাড়ি ছেড়ে পাশেই একটি নতুন খড়ের বাড়িতে বসবাস করেছিলেন। সে সময় জয়রামবাটিতে দুর্গা পূজার চল ছিল না। সারদা দেবীর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী-র উদ্যোগে বাড়িতেই সাড়ম্বরে জগদ্ধাত্রী পূজা হত।
জয়রামবাটি মাতৃমন্দির সূত্রে জানানো হয়েছে, এখানে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে মন্ত্র, বিধি ও তিথি মেনে দুর্গা পূজা হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা দেখতে হাজার হাজার দর্শক মাতৃমন্দিরে ভিড় করেন। আড়ম্বর নয়, মা সারদার জন্ম ভিটের দুর্গা পূজার মূল বিষয়বস্তু ভাব, ভক্তি, শ্রদ্ধা আর পরম নিষ্ঠা। এই সব কিছুকে বজায় রেখে বছরের পর বছর ধরে দুর্গা পূজা হয়ে আসছে শ্রী শ্রী মা সারদা দেবীর পূণ্য জন্মভূমি বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে।