কলকাতা: ডিভিসির ছাড়া জলে রাজের একাধিক জেলা প্লাবিত৷ জানা গিয়েছে, আজ জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে ডিভিসি৷ ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে৷ মাইথন থেকে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ডিভিসি’র ছাড়া জলে ভাসছে দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি৷ কী ভাবে রয়েছে বন্যা কবলিত মানুষগুলো?
আরও পড়ুন-‘বাঁধ না করে ভাতায় খরচ করেছে’ মমতার ‘ম্যান ম্যাড’ তত্ত্ব উড়িয়ে বিঁধলেন শুভেন্দু
ডিভিসি জল ছাড়ার পর প্রতিবারই অসুবিধার মধ্যে পড়ে উদয়নারায়ণপুরের মানুষ৷ ইতিমধ্যেই সেখানে অপারেশনে নেমেছে সেনা৷ বিকেলের পর থেকেই সেখানে সেনা রয়েছে৷ বিভিন্ন গ্রামে বোট নিয়ে তাঁরা যেতে শুরু করেছেন৷ কী ভাবে উদ্ধার কাজ চলবে, কোন কোন গ্রামে তারা ঢুকবে সবটা সেনারা ঠিক করে নিচ্ছে৷ পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে বেলা ২টোর পর থেকে রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স৷ গভীর জলের জন্য অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের ভিতরে ঢুকতে পারছে না৷ এমনকী ট্রাক্টরে করে রোগীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ঘাটালের পরিস্থিতিও দুর্বিসহ৷ বহু মানুষ আশ্রয়হীন৷ ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁরা নিঃস্ব৷ কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাড়ির চালের উপর৷ কিছু মানুষ নৌকি নিয়ে জল ডিঙিয়ে রাস্তায় আসতে পেরেছেন৷ চন্দ্রকোনা রোডের জায়গায় জায়গায় মানুষ ত্রিপল খাটিয়ে, কোথাও আবার ট্রাক্টরের উপর আশ্রয় নিয়েছে৷ জলে তলায় চলে গিয়েছে ঘাটাল থানা, রাস্তা, ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাট। বন্যার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৪ বছরের এক শিশুর৷ উদ্ধার কাজ শুরু করেছে এনডিআরএফ জওয়ানরা৷ দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে৷ তবে এখানে ত্রাণ শিবিরের কোনও দেখা নেই৷ ফলে কোথায় থাকবেন তারা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ একই ছবি বীরভূমের নানুরে৷ একটা বিশাল অংশ চলে গিয়েছে জলের তলায়৷ জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে অসংখ্য ঘর বাড়ি৷
লাগাতার বৃষ্টি এবং ডিভিসির বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গ৷ বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ লক্ষের বেশি মানুষ৷ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বন্য পরিস্থিতি নিয়ে নবান্ন থেকে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। পরে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বীবেদি সাংবাদিকদের বলেন, এখনও দামোদর, রূপনারায়ণ, অজয় সহ বিভিন্ন নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া, সোনামুখী , হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা, হুগলির খানাকুল,আরামবাগ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। ঘাটালে বাড়ি ভেঙে এক শিশু সহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, দুর্গতদের জন্য দেড় হাজার ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে এবং সেখানে দুই লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬ লক্ষের বেশি ত্রিপল এবং দুই হাজার মেট্রিক টন চাল বিলি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি তে পানাগর সেনা ছাউনি থেকে আট কলাম সেনা ছাড়াও জাতীয় বিপর্যয় বাহিনীর ২৫টি এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৪টি দল মোতায়েন রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি তদারকি করার জন্য মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সদস্য ও আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।