লন্ডন: সেটা ১৯৬৩ সাল৷ সেদিনের সময়গুলো কিংবা আজ অবধি লন্ডনের ‘ক্যামডেন’ প্রাঙ্গনের পুজোর আমেজর ছবিটা বদলায়নি এতটুকু। তৎকালীন লন্ডনে বসবাসকারী কয়েকজন প্রবাসী বাঙালির হাত ধরে শুরু হওয়া এই প্রাচীন পুজোটা ৫৬টি শরৎ পেরিয়ে গেলেও ভালোলাগার স্মৃতিতে আজও ভরপুর।
মহামারীর গ্রাসে গোটা পৃথিবী যখন টলোমলো ঠিক তেমন দিনেও ক্যামডেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা উমার আরাধনায় বিন্দুমাত্র খামতি রাখেনি৷ বরং বিশ্বকে রক্ষা করার প্রার্থনা জানিয়েছেন বারংবার। সেদিন ইংল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের এক এক করে অনেক পুজো মণ্ডপের অন্দরে বইছিল অতিমারীর অন্ধকার। স্তব্ধ ব্রিটেনে তখন কৈলাশ থেকে সপরিবারে মা উমা পা রেখেছিলেন টেমসের ধারে সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির “ক্যামডেনের “সাজানো মাটিতে।
একথা সঠিক, “ক্যামডেনে” পুজো মণ্ডপের আভিজাত্যের গরিমার বর্ণনা শুধু তারাই দিতে পারে, লক্ষী মিত্তলদের পুজোর এমন আভিজাত্যের টানেই দেশ বিদেশের মিডিয়া ছুটে আসে এই লন্ডনে৷ পর্দায় সে দৃশ্য চোখেও পরে বারবার। পঞ্জিকা মতে টেমসের তীরের খুঁটি পুজো দিয়েই প্রতিবছর ক্যামডেন পুজো কমিটির যাত্রা শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন সকালে৷ সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির মণ্ডপে মায়ের বোধনের পদচিহ্ন আগমনীর বার্তা নিয়ে আসে সুদূর এই লন্ডনের মাটিতে। যুক্তরাজ্যের ৬৪টি পুজোর রেষারেষির মধ্যেও স্কটিশ লাইব্রেরির পূজামণ্ডপের ছত্রে বয়ে চলা সাবেকিয়ানা ভাবায় বাংলার কথা, শেখায় বাঙালি সংস্কৃতির কথা।
ষষ্ঠী, সপ্তমী অষ্টমী নবমী পেরিয়ে দশমী এবারেও পুজোর পাঁচ দিনই মায়ের বরণ, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো,কুমারী পুজো অবশেষে মায়ের বিসর্জনের বিদায়বেলায় মনখারাপের পালা। পুনরায় একবছরের অপেক্ষা। এবারেও পূজামণ্ডপের অন্দরে থাকবে লালপাড় শাড়িতে বঙ্গতনয়া, ছেলেদের পরনে ধুতি -পাঞ্জাবী। ঢাক, ধুনোর গন্ধ ধুনুচি নাচ, শঙ্খ উলুধ্বনি সিঁদুর খেলা নিয়ে সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির অন্দরে বইবে উৎসবের আনন্দধারা যার মেজাজটাই হবে পুরোপুরি অন্যরকম। একঝলকে দেখলে মনে হবে আহা ! এতো আমাদের সেই পুরোনো কলকাতা, লন্ডন তো নয়। শুধু কি উৎসবের আনন্দ? প্রত্যেক বারের মতো এবারেও গানে গল্পে খাওয়াদাওয়ার আসর সাজিয়ে নিয়ে স্কটিশ লাইব্রেরির অলিন্দে ভারতীয় বাঙালির কব্জি ডুবিয়ে চলছে ভুরিভোজের পালা। এবং আবার আরেকটা বছরের অপেক্ষা৷