কলকাতা: দিনসাতেক আগে বিধাননগরের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এক প্রৌঢ়া রোজকার অভ্যাসমতো বেরিয়েছিলেন প্রাতঃভ্রমণে। সকাল সোয়া সাতটার কাছাকাছি পিছন থেকে অত্যন্ত দ্রুতবেগে চলে আসে একটি মোটরবাইক। আরোহী ছিল দু’জন। যাদের একজন ওই প্রৌঢ়ার গলা থেকে সোনার চেন এক ঝটকায় টেনে নেয়। বাইক উধাও হয়ে যায় দ্রুত। প্রৌঢ়া টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান মাটিতে।
শুরু হয় তদন্ত। বিধাননগর(পূর্ব) থানা এবং কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ সক্রিয়তায়। অভিজ্ঞ ‘সোর্স’-দের কাজে লাগানো হলেও প্রাথমিক ভাবে সূত্র মিলছিল না কিছু। অবশেষে সামান্য আলোর রেখা৷ লাগাতার তিনদিন তিনরাত ধরে বিধাননগর- বেলেঘাটা অঞ্চলের অন্তত শ’দুয়েক সিসিটিভি-র ফুটেজ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তন্নতন্ন করে খুঁটিয়ে দেখে। ছিনতাইযের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীদের বাইকটির রং ছিল লাল। ঘটনার সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি লাল বাইকে দু’জন প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে বিধাননগর থেকে বাইপাসের দিকে, এমন ফুটেজের হদিশ মিলল ঘটনার দিনতিনেক পর। একটি স্থানীয় দোকানের সামনে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে।
দুষ্কৃতী সম্ভবত এরাই? এরাই যদি বা হয়, এরা যে কারা সেটা তো জানতে হবে। কিন্তু ফুটেজে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দু’জনেরই মুখে মাস্ক, এবং বড় হেলমেট। চোখটুকু দেখা যাচ্ছে শুধু। মুখের আদলের ন্যূনতম ধারণা করা যা থেকে একপ্রকার অসম্ভবই। আরও সমস্যা, বাইকের নম্বরপ্লেটও স্পষ্ট নয় ফুটেজ থেকে। আবছা একটা আন্দাজ করা যায় মাত্র। চষে ফেলা হল বাইপাসের যেখানে যা সিসিটিভি আছে, তার যাবতীয় ফুটেজ সেদিনের। ওই লাল বাইকের ছবি পাওয়া গেল না। আন্দাজ করা গেল, দুষ্কৃতীরা অভিজ্ঞ, এবং সে কারণেই বাইপাস ধরে পালায়নি। ক্যামেরার নজর এড়াতে চম্পট দিয়েছে অলিগলি দিয়ে। তবু নজরদারি রাখা হল অষ্টপ্রহর, বাইপাসের সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরায়।
এবং অতন্দ্র প্রহরার ফল মিলল দিনদুয়েক আগে। মুকুন্দপুরের কাছের এক ক্যামেরায় দেখা মিলল দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়া লাল বাইকের। যাতে বসে-থাকা দুই আরোহীর চেহারার আদল মিলে যাচ্ছে ঘটনার দিনে পাওয়া ফুটেজের সঙ্গে। এবার সুবিধে, মাথায় হেলমেট নেই। মুখ বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। বাকিটা সোর্সওয়ার্ক আর টিমের অক্লান্ত অধ্যবসায়। ফুটেজের ছবি সোর্সদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, কলকাতা এবং তার আশেপাশের থানাগুলোয় ছবি পাঠানো এবং অবশেষে বাইকচালককে চিহ্নিত করা। চালকের নাম মনোজ ঘোষ। দাগী ছিনতাইবাজ। গড়ফা এলাকার বাসিন্দা। বয়স ২৬। কিশোরবয়স থেকেই দুর্দান্ত বাইক চালানোয় নামডাক। বাইক নিয়ে নানান ‘স্টান্ট’ দেখানোয় সিদ্ধহস্ত বলে পরিচিতরা নাম দিয়েছিল ‘স্টান্ট মনোজ’।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘গুণের’ শেষ নেই এই ‘স্টান্ট মনোজ’-এর। আঠারো বছরে প্রথম ছিনতাই। তারপর একাধিক। লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতেও ধরা পড়েছে বেশ কয়েকবার, কলকাতায় বাইক চেপে ছিনতাইয়ের অভিযোগে। ভিনজেলায় ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে জেলও খেটেছে বছরকয়েক। পুলিশ জানিয়েছে, এরপরই বাইপাস-সংলগ্ন এলাকা থেকে মনোজ ও তার সঙ্গী ববাবাই দাসকে গ্রেফতার করে৷ দু’জনেই কবুল করেছে বিধাননগরে ছিনতাইয়ের ঘটনা। উদ্ধার হয়েছে অপরাধে ব্যবহৃত বাইকটি। চলছে ছিনতাই-হওয়া চেনটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা৷ স্বাভাবিকভাবেই, পুলিশের এহেন ভূমিকায় খুশী বাসিন্দারা৷