কোচবিহার: চা বাগানের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অনেক আজানা কাহিনী৷ বাইরে থেকে চা বাগানকে দেখতে যতটা সুন্দুর, ততটাই কঠিন চা বাগানে কাজ করা মানুষগুলোর জীবন৷ অভাব-অনটন আর কঠিন পরিশ্রম৷ ভাঙাচোরা জীর্ণ ঘর জুড়ে হাঁড়িয়ার গন্ধ৷ এবার পিছিয়ে পড়া এই চা বাগিচা মহল্লা থেকেই হল শিক্ষার জয়জয়কার৷ প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন চা শ্রমিক গণেশ ঠাকুরের ছেলে নীলেশ ঠাকুর৷ মা বিন্দুদেবী গৃহবধূ৷
আরও পড়ুন- খাস কলকাতায় ‘কাঁচা বাদাম’, তৃণমূলের প্রচারে ভাইরাল ‘বাদামকাকু’
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে ইতিহাস গড়েছে নীলেশ৷ ছেলের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর বাবা-মা৷ ছেলে যে তাঁদের মহল্লাকে এক লহমায় শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করছেন। নীলেশের হাত ধরেই স্বাধীন ভারতে উত্তরবঙ্গের চা বাগানের ইতিহাসে রচিত হয়েছে এক স্বর্ণ অধ্যায়৷
পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়৷ কী ভাবে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এই অসাধ্য সাধন করলেন নীলেশ? বন্ধ মধু চা বাগানের স্কুলে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে স্থানীয় হাইস্কুলে ভর্তি হন নীলেশ। অভাবের সংসার তাঁদের৷ তাই মাধ্যমিক পাশ করার পর আর নীলেশকে পড়াতে পারেননি সাধারণ চা শ্রমিক গণেশবাবু৷ কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না নীলেশও৷ শত কষ্ট সহ্য করেও অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে লড়াই করে গিয়েছেন৷ নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে গৃহশিক্ষকতা করেছেন। নিজের উপার্জিত অর্থেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন৷ দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে ভর্তি হন জয়গাঁর ননী ভট্টাচার্য কলেজে। এরপর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিন্দি ভাষায় এমএ পাশ করেন।
এর পর নীলেশ চলে আসেন কলকাতায়৷ হাওড়ার লিলুয়ায় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন৷ পাশাপাশি শুরু হয় পিএইচডি’র কাজ৷ চার বছর ছ’মাস সময় লাগে গবেষণা সম্পন্ন করতে৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক হিমাংশু কুমারের অধীনে তিনি গবেষণা শেষ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল, উত্তরাখণ্ডের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক গঙ্গাপ্রসাদ বিমলের সাহিত্য।
সম্প্রতি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন চা বাগিচা মহল্লার ছেলে৷ অধ্যাপক হিমাংশু কুমার বলেন, এই প্রথম কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও চা বাগানের ছেলে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করল৷ তাঁর কথায়, নীলেশ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র৷ তাঁর মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিবোধ৷ ইউজিসির গাইড লাইন অনুসারে গবেষণার জন্য পাঁচ বছর সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু সময়ের আগেই গবেষণা শেষ করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন নীলেশ৷ তিনি বলেন, জীবনের পথ কোনও দিনই সমৃণ ছিল না৷ হার না মানা মনোভাব নিয়েই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি৷ তাঁর ইচ্ছা আগামী দিনে তাঁর স্বপ্নের ‘আঁতুড় ঘর’, উত্তরবঙ্গের চা বাগানে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো৷