৪০ হাজার কোটির সাম্রাজ্যের মোহ ভুলে বেছে নেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন! চমকে দেয় আজহানের কাহিনি

৪০ হাজার কোটির সাম্রাজ্যের মোহ ভুলে বেছে নেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন! চমকে দেয় আজহানের কাহিনি

কলকাতা:  কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে শাক্য নামে এক ক্ষত্রিয় রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ  করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। তার পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা। মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি গৌতম বুদ্ধকে আকুল করেছিল৷ তাই রাজকীয় বিলাস-বৈভব, পরিবার ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন ধর্মের পথ৷ দিব্যজ্ঞান লাভের পর তিনি ধর্ম প্রচার করেন৷  তাঁর সেই আদর্শকে সম্বল করে এগিয়ে চলেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা৷ বৈভব ছেড়ে তাঁদের অনেকেই বেছে নিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন৷ কেউ আবার কয়েক হাজার কোটির সাম্রাজ্যকে জানিয়েছেন বিদায়৷ 

 

 

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল রবিন শর্মার লেখা ‘দ্য মঙ্ক হু সোল্ড হিজ ফেরারি’ বইটি। সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল সেই বই। দু’মলাটে ধরা পড়েছিল সফল আইনজীবী ‘জুলিয়ান ম্যান্টল’-এর কাহিনী৷ কী ভাবে আধ্যাত্মিক জীবনকে বেছে নিয়ে নিজের প্রাসাদ, বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন, সেই কাহিনীই ফুটে উঠেছিল লেখকের কলমে৷ তবে জুলিয়ান ছিল কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু, আজহান সিরিপানিয়োর কাহিনি হল বাস্তব। যদিও কাহিনির জুলিয়ানের সঙ্গে বাস্তবের আজহানের মিল বিস্তর।

 

মালয়েশিয়ার ধনকুবের আনন্দ কৃষ্ণণের একমাত্র পুত্র আজহান। আনন্দ বর্তমানে মালয়েশিয়ার বাসিন্দা হলেও, তিনি জন্মসূত্রে তামিল। মালয়েশিয়ার একটি টেলিকম সংস্থার মালিক তিনি৷ টেলিকম সংস্থা ছাড়াও সংবাদমাধ্যম, প্রাকৃতিক তেল এবং গ্যাস, নির্মাণ ব্যবসা, উপগ্রহের যন্ত্রাংশ তৈরির সংস্থাতেও বিনিয়োগ রয়েছে আনন্দের। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

আনন্দের বিপুল সম্পত্তি একমাত্র উত্তরাধিকারী তাঁর পুত্র আজহান। কিন্তু বাবার তৈরি এই পেল্লাই সাম্রাজ্য বেঁধে রাখতে পারেনি আজহানকে। তিনি বেছে নেন আধ্যাত্মিকতার পথ৷  বাবার অগাধ সম্পদকে অবলীলায় উপেক্ষা করে পা বাড়ান সন্ন্যাসের পথে। বেছে নেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন। তবে নিজের সাম্রাজ্য রক্ষায় ছেলেকে বাঁধতে চাননি আনন্দও৷ আজহানের বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্তে কখনই বাধা হয়ে দাঁড়াননি তিনি। বরং ছেলেকে সব থেকে বেশি উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনিই৷ 

আজহানের মনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি নিবিড় টান, গভীর বিশ্বাসের ভিত গড়েছিলেন তাঁর বাবাই। আনন্দ নিজেও একজন নিবেদিত প্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অসরকারি সংস্থায় তাঁর দানধ্যান করার কথা কারও অজানা নয়। ছেলে পার্থিব সুখের মায়া ত্যাগ করে কঠিন জীবনযাপন বেছে নিয়েছেন শুনে, এতটুকও চকিত হননি। কিন্তু কেন বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে আজহান বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সে বিষয়ে তিনি কখনই মুখ খোলেননি৷

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে জীবন কাটাচ্ছেন আজহান৷ তাঁর বর্তমান ঠিকানা তাইল্যান্ডের দতাও দম মঠ৷ ভিক্ষা করে যে যৎসামান্য আয় হয়, তা দিয়েই অনাড়ম্বর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। আজাহান কিন্তু আনন্দের প্রথম পক্ষের সন্তান৷ আজহানের জন্মদাত্রী মা ছিলেন তাইল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্য। ফলে আজহানের শরীরেও বইছে রাজবংশের রক্ত৷ আজহানের বেড়ে ওঠা ব্রিটেনে। দুই বোনের সঙ্গে সেখানেই মানুষ হয়েছেন তিনি। মোট আটটি ভাষায় দখল রয়েছে তাঁর। এত প্রতিভা নিয়েই সে আজ সামান্য বৌদ্ধ ভিক্ষু৷ আজহানের জীবনকাহিনি বহু তরুণ-তরুণীকেই অনুপ্রাণিত করেছে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + 6 =