মস্কো: উত্তর মেরুর সাইবেরিয়ায় জমাট বাঁধা বরফে ২৪ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকার পর আবার মাথা তুলল একটি আণুবীক্ষণিক প্রাণী। নাম ডেলোইড রোটিফার। আয়তনে প্রাণীটি এতই ক্ষুদ্র যে মাইক্রোস্কোপ ছাড়া চারপাশে তার অস্তিত্ব ঠাহর করা খুব কঠিন৷ সেই জন্যই বিজ্ঞানীরা আর্কটিক মাইক্রোস্কোপিক জীববৈচিত্র্যের দলে একে স্থান দিয়েছেন। এই প্রাণীটি মূলত জলীয় পরিবেশে বাস করে এবং বহু বছর এর বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে।
সিনএনএনের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি সাইবেরিয়ায় পৃথিবীর চিরতরে বরফে পরিণত হওয়া স্তর বা পার্মাফ্রস্ট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যার সেখানে খনন করে এই প্রাণীটিকে খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা৷ রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ ফিজিওকেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল প্রবলেমস ইন সয়েল সায়েন্সের বিজ্ঞানী স্তাস মালাভিন এর সন্ধান পেয়েছেন৷ সেল প্রেস জার্নালে রোটিফার নিয়ে এই বিজ্ঞানীর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, স্তাস এবং তাঁর দল সাইবেরিয়ার বরফ খুঁড়তে গিয়ে মাটির ১১ হাত নিচে এই বহুকোষীয় প্রাণীটির সন্ধান পান। কিন্তু এরপর রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে এর শরীরে যে জৈব খনিজের সূত্র আছে, তা ধরে রোটিফারের বয়স নির্ধারণ গিয়েই স্তম্ভিত হন তাঁরা৷ পার্মাফ্রস্ট থেকে বের করে আনা আণুবীক্ষণিক প্রাণীগুলো ২৪ হাজার বছরের পুরোনো। এই গবেষকরা আগেও একটি গবেষণা করেছিল, যাতে দেখা গিয়েছিল, রোটিফার হিমায়িত অবস্থায় ১০ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। যদিও পুরোপুরি বরফের স্তর থেকে কোনও প্রাচীন প্রাণীর বেঁচে থাকার ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে হাজার বছরের পুরনো নমুনা থেকে অ্যান্টার্কটিক মস সফলভাবে জন্ম নিয়েছে। এ ছাড়া সার্বিয়া থেকে ৩০ হাজার বছরের পুরনো নেমাটোড পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মালাভিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বহুকোষী প্রাণীদের হিমায়িত করে শত শত বছর সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং তাকে জীবিত রাখা যায়। তবে কী ভাবে ২৪০০০ বছর ধরে এই প্রাণীটি ঘুমিয়ে কাটাল, সেটার ব্যাখ্যা কিন্তু এখনও দিতে পারেননি স্তাস বা দলের কেউ৷ তাঁদের বক্তব্য, এটা অনেকটা শীত ঘুমের মতো৷ কিন্তু শীতঘুম এতটা দীর্ঘস্থায়ী কী ভাবে হয়, আপাতত সেই রহস্য ভেদ করতে ল্যাবরেটরিতে রোটিফার নিয়ে পরীক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা।