পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ, তৃণমূলে যোগ দিলেন বিনয় তামাং

পৃথক গোর্খাল্যান্ড নয়, চাই পাহাড়ের উন্নয়ন

কলকাতা:  পাহাড়ের রাজনীতিতে রং বদল৷ আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি বিনয় তামাং। তৃণমূলে যোগ দিতে এদিন সকালেই কলকাতায় পৌঁছে যান তিনি। দুপুরে ক্যামাক স্ট্রিটের একটি হোটেলে  রাজ্যের দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন মোর্চা নেতা। এদিনই আরও এক মোর্চা নেতা রোহিত শর্মাও শাসক দলে যোগ দিলেন৷  রোহিত কার্শিয়াংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক। জিটিএ নির্বাচনের আগে বিনয় তামাংয়ের জোড়া ফুল শিবিরে যোগদান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ তামাং ছিলেন জিটিএ-র চেয়ারম্যান৷ 

এদিন মলয় ঘটর বলেন, আজকের পর পাহাড়ের রাজনীতিতে নিশ্চিতভাবেই বদল আসতে চলেছে৷ তৃণমূলের ঝাণ্ডা হাতে পাহাড়ে নামবেন বিনয় তামাং এবং রোহিত শর্মা৷  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজে আকৃষ্ট হয়েই তাঁরা তৃণমূলে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷  অন্যদিকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিনয় তামাং বলেন, “গত ১৫ জুলাই আমি দল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। পদও ছেড়েছিলাম। এরপর থেকে ১৬৪ দিন হয়ে গেল। এই সময়ের মধ্যে আমি অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি বা যোগাযোগ করিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। উনি একজন ডায়ানামিক লিডার। এক সময় স্থানীয় পার্টি করতাম। এখন জাতীয় দল করে মানুষের সেবা করতে চাই। আমরা ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চাই। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে আমরা পাহাড়বাসী, গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষের সেবা করতে চাই।” 

গোর্খাল্যান্ড ইস্যু নিয়ে কথা উঠলে তামাং বলেন, ‘‘২০১৭ সালে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের জন্য আমরা ১০৫ দিন আন্দোলন করেছিলাম৷ সেই সময় সেখানকার মানুষকে বাঁচাতে আমিও সেক্রিফাইজ করেছিলাম৷ এটা একটি সাংবিধানিক ইস্যু৷ ভারতীয় জনতা পার্টি সেই ললিপপ দেখিয়েই তিনবার সাংসদ জিতিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷ এই ইস্যুটি নিয়েই ওরা আমাদের আবেগ নিয়ে খেলেছে৷ আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন চাইছি৷ পৃথক গোর্খাল্যান্ড চাইছি না৷ শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে পর্যটন প্রতিটি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে চাই৷ ’’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে পাহাড়ে তীব্র অশান্তি শুরু হলে গা ঢাকা দেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং৷ তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁরই দলের দুই নেতা বিনয় তামাং ও অনীত থাপা নতুন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গঠন করে পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন৷ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় মোর্চা৷ একটি বিনয়পন্থী মোর্চা ও আরেকটি বিমলপন্থী মোর্চা। এর পরেই পাহাড়ে শুরু হয় দুই মোর্চার ক্ষমতার লড়াই। একুশের বিধানসভার লড়াইয়েও তারা ছিল পৃথক৷ ভোটে বিনয়পন্থী মোর্চার একজন প্রার্থী জিতে বিধায়কও হন। কিন্তু এর কৃতিত্ব নিতে চান অনীত থাপা৷ যার জেরে বিনয় তামাং-এর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এরপরেই গত জুলাই মাসে তিনি দল ও পদ ছাড়েন৷ এর পর থেকেই তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়৷ অবশেষে আজ তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করলেন তিনি৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 7 =