কলকাতা: রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য নানা প্রকল্প রয়েছে রাজ্যের শ্রম দফতরে৷ সামাজিক মুক্তি যোজনার মতো জনপ্রিয় প্রকল্পের কথা সকলেরই জানা৷ কিন্তু এই সকল প্রকল্পের তথ্য অনুসন্ধান করলে হয়তো দেখা যাবে সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ভূত৷ যা নিয়ে শ্রম দফতরের উদ্বেগও কম নয়৷ এই ‘বেনোজল’-দের জন্যেই রাজ্যের কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা৷ এবার বালি থেকে কাঁকড় বেছে তথ্য ভাণ্ডারকে স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নিল রাজ্যের শ্রম দফতর। সেই উদ্দেশেই শ্রম দফতরের তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে আধার সংযোগ করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন-সহ জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত অন্তত ২ কোটি তথ্য থেকে ছেঁকে বার করা হবে বেনোজল৷।
আরও পড়ুন- ফের কলকাতায় ওমিক্রন আক্রান্তের হদিশ, সংক্রমণের নিরিখে প্রথম পাঁচে বাংলা
শ্রমদফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের প্রকল্প বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার আওতায় ১ কোটি ৩৪ লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে দুয়ারে সরকার বা অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৬৪ লক্ষ শ্রমিকের আধার নম্বর দফতরের হাতে এসেছে৷ কিন্তু বাকি শ্রমিকদের তথ্য এখনও দফতরের হাতে আসেনি৷ ইতিমধ্যে জেলাওয়ারি খোঁজ খবর চালিয়ে শ্রমদফতরের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন যে উপভোক্তাদের এই তালিকায় মিশে রয়েছে কিছু বেনোজল৷ একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন৷ একাধিক নামে যোজনার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ঢোকাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় মৃত শ্রমিকের পরিবারকেও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে৷ ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়েও নাম ভাঁড়িয়ে টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে শ্রম দফতরের কর্তাদের দৃঢ় ধারণা৷ কোথাও আবার একই ব্যক্তি বহুবার ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট পরিবর্তন করে টাকা নেওয়ার নজিরও রয়েছে৷ সরকারির প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় রুখতে আধার সংযোগই (সিডিং) একমাত্র পথ বলে অফিসারদের মত। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা মনে করছেন, আধার সংযোগের পর শ্রম দফতরে নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা কোটির নীচে নেমে আসবে।
এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে বলে আধিকারিকদের অনুমান। বর্তমানে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের পোর্টালে ৩৬ লক্ষ নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এই পরিসংখ্যান সরকারের কাছে একেবারেই স্বস্তিদায়ক নয়৷ যুবশ্রী প্রকল্পে নথিভুক্ত বেকার যুবক-যুবতীদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা দিতে হয় রাজ্য সরকারকে৷ নথিভুক্ত বেকাররাই শুধুমাত্র এই পোর্টালে নাম তুলুক, চেয়েছিল সরকার। তেমনই মনে করা হয়েছিল কোনও বেকার যুবক-যুবতী রোজগার করতে শুররু করলে অথবা চাকরি পেয়ে গেল পোর্টাল থেকে নাম সরিয়ে নেবে৷ কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মারফত দফতরের কাছে খবর রয়েছে যে, এমন অনেকের নাম এখনও পোর্টালে অর্ন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাঁরা বর্তমানে কর্মরত। পোর্টাল থেকে এই সকল অপ্রয়োজনীয় নাম ছেঁটে ফেলতে আধার সংযোগকেই হাতিয়ার করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷