কলকাতা: পরিবর্তন। ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’ বোঝাতে যদি কোনও শব্দ থেকে থাকে তাহলে সেটা হল পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের এক এবং একমাত্র কারণ সময়। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সময় পরিবর্তন ঘটাবে। খারাপ থেকে ভালো এবং ভালো থেকে খারাপ, পরিবর্তনের জন্য দায়ী সময়ই। আর প্রকৃতি এই পরিবর্তনের বহু উদাহরণ দিয়ে এসেছে বহুকাল ধরে। এবার সেই পরিবর্তন কতটা ভালো বা খারাপ, তার বিচার মানুষই করবে। তবে এই পরিবর্তন বোঝার জন্য কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থানের অতীত এবং বর্তমানের ছবিই যথেষ্ট।
কথা বলা যাক, ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক দুর্গ লালকেল্লার। ১৬৩৮ সালে মোগল শাসক শাহজাহান রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার সময় লালকেল্লা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯০৫ সালে এই কেল্লার যে অবস্থা ছিল তা এখনকার লালকেল্লার ছবির সঙ্গে একেবারেই যায় না। বদল এতটাই এসেছে। কেল্লার সামনের কাঁচাপাকা রাস্তা বদলে গিয়েছে প্রশস্ত কংক্রিটে, অতীতের ছবিতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ দেখা গেলেও, এখন থিকথিকে ভিড় লক্ষ করা যায়। ২০২৩ সালের লালকেল্লার ছবির সঙ্গে আগের ছবি দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
সময় কতটা বদল আনতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ হল দুবাই। মাত্র ৩০-৪০ বছর আগে পর্যন্ত দুবাই ছিল বালির শহর। গুটিকয়েক তেল সংশোধনাগার এবং নির্মাণ ভবন ছাড়া সেখানে আর ছিল বলতে শুরু বালি আর বালি। যতদূর চোখ যায়, বালুধারা নজরে আসত। কিন্তু এখন, ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে এই দুবাইকে চেনা দায়। কী নেই আরব সাগরের তীরের এই শহরে। ঝাঁ-চকচকে হোটেল থেকে শুরু করে সুন্দর, প্রশস্ত রাস্তা, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি। ভুললে চলবে না, বিশ্বের উচ্চতম ইমারত বুর্জ খলিফাও এখানে অবস্থিত। এখানে বর্তমানে বিত্তশালীদেরও অভাব নেই।
পরিবর্তনের অন্য এক ভালো উদাহরণ, আমেরিকার অন্যতম বাণিজ্য শহর লস এঞ্জেলস। একটা সময় ছিল যখন এই শহরে ফাঁকা জমি ছাড়া কিছু ছিল না। মাঝে মাঝে কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট বাড়ি দেখা যেত। মানুষ পশুপালন করে দিন গুজরান করত। কিন্তু বর্তমানে আকাশছোঁয়া বহুতল, ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট, অফিস, রেস্তরাঁর জন্য যেন পা ফেলার জায়গা নেই। কিছু বছরের অন্তরে ভোল পালটে ফেলেছে এই মায়া নগরী।
তবে এই সব কিছুকে পিছনে ফেলে দেয় জাপানের এই দুটি শহরের পরিবর্তন। হিরোশিমা, নাগাসাকি। কেন বলা হচ্ছে, বুঝতে কারোর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ১৯৪৫ সালে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করা হয় এই দুই শহরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল দুই শহরের সবকিছু। লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার সেই ঘটনা আজও নাড়া দেয়। কিন্তু বর্তমানে হিরোশিমা, নাগাসাকি সকলকে চমকে দেবে। সবকিছু এত বদলে গিয়েছে যে, দেখে বোঝার উপায় নেই, এক সময় এখানেই বিধ্বংসী ঘটনাটি ঘটেছিল। বড় রাস্তা, ইমারত, যেন অতীতের সেই কালো অধ্যায় ঢেকে দিয়েছে।