ময়নাগুড়ি: উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা৷ উল্টে গেল পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস৷ জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। বহু যাত্রীর প্রাণহানীর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে শুরু করেছেন রেলের আধিকারিক ও রেল পুলিশ। তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজ৷ পদস্থ কর্তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও৷ এখনও পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে৷
আরও পড়ুন- SSC: ‘স্বচ্ছতা দরকার ছিল’, দুর্নীতির প্রসঙ্গে বিস্ফোরক প্রাক্তন চেয়ারম্যান
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ১৫৩৬৬ আপ বিকানের এক্সপ্রেস৷ এই দুর্ঘটনায় ৫০ জন যাত্রীর প্রাণহানীর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তবে অন্ধকার নেমে আসায় আহত বা নিহতের সংখ্যাটা স্পষ্ট নয়৷ রেলের তরফে আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ কারণ উদ্ধার কাজে যে দীর্ঘ সময় লাগবে, রেলের কাছে তা স্পষ্ট৷ এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই আলিপুর থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছছে একটি উদ্ধারকারী দল। উপস্থিত রয়েছে দমকলবাহিনী৷ বিকানের এক্সপ্রেসের চার-পাঁচটি বগি একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে৷ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যাত্রীরা৷ দুর্ঘটনার সময় ৪০ কিলোমিটার বেগে ট্রেনটি যাচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে৷ এই ঘটনায় বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
দুর্ঘটনার খভর পেয়েই আলিপুরদুয়ার এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রেল আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন৷ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা৷ চারটি বগি উল্টে গিয়েছে বলে রেলের তরফে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়৷ পরে জানা যায় ইঞ্জিনের পর থেকে মোট ১২টি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তারমধ্যে ৭টি কামরা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত৷ একটি কামরার উপর আরেকটি কামরা উঠে গিয়েছে৷ ক্রেন ছাড়া এই সকল কামরায় উদ্ধার সম্ভব নয়৷ কটি এসি বা নন এসি বগি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তা এখনও জানা যায়নি৷ জেনারেল কামরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷
আলিপুরদুয়ারের পাশাপাশি শিলিগুড়ি থেকে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর চেষ্টা চলছে৷ কিছু কামরা যে ভাবে উল্টে রয়েছে সেখান থেকে উদ্ধার করাটা খুব বেশি কঠিন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে কিছু কামরা এমনভাবে উল্টে গিয়েছে, সেখানে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হবে৷ ওই সকল কামারায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ প্রথেম ম্যানুয়ালি উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়৷ পরে গ্যাস কাটার দিয়ে রেলের বগি কাটা শুরু হয়৷ তবে এখনও ক্রেনের বন্দোবস্ত করা যায়নি৷
আলিপুর দুয়ারের ডিআরএম দিলীপ কুমার সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘ব্লক সেকসনে আপ বিকানের এক্সপ্রেসের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে৷ কী কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ আমরা দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছি৷ আহতের সংখ্যা স্পষ্ট নয়৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধারকারী দল পৌঁছচ্ছে৷’’
প্রয়োজনে আধাসেনার সাহায্য নেওয়ার হবে কিনা, সেই আলোচনাও চলছে৷ ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স৷ চালু হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর-৮১৩৪০৫৪৯৯৯৷ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, এখনও পর্যন্ত তিনজনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে৷ ভিতরে অনেক যাত্রী জীবিত আটকে রয়েছেন৷ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসছে৷ তবে অকুস্থল থেকে হাসপাতাল বেশ দূরে থাকায় দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ ময়নাগুড়ি হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ১৬ জন আহতকে ভর্তি করা হয়েছে৷ ঘটনাস্থে রয়েছে ৫১টি অ্যাম্বুলেন্স৷