কলকাতা: কেন্দ্রের দেওয়া পদ্ম সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। বুদ্ধদেবের পাশে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে বামেরা৷ পাল্টা বিঁধেছে বিজেপি৷ এই বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যেই এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিলেন বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন৷ একদা তাঁর বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষিদ্ধ করেছিল বাম সরকার৷ সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ মৌলবাদীদের আক্রমণের ভয়ে কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে। এর পর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে৷ কিন্তু বুদ্ধদেব কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেউই তসলিমাকে রাজ্যে ফেরানোর চেষ্টা করেননি৷ আর এবার বুদ্ধদেব পদ্মভূষণ ফেরাতেই পুরনো প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিলেন লেখিকা।
আরও পড়ুন- ঢুকছে উত্তুরে হাওয়া, হু হু করে নামবে পারদ, হাড় কাঁপানো শীতের ইঙ্গিত হাওয়া অফিসের
বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লিখেন, ‘এক পরিচিত লোক ফোন করে বললো, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদ্ম ভূষণ পেয়েছেন তোমার বই নিষিদ্ধ করার জন্য আর তোমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।’ কী সব আজেবাজে কথা বলছো! আবার বললো, উনি পুরস্কার নেবেন না জানিয়ে দিয়েছেন। –ও মা, কেন? — অনেক চেষ্টা চরিত্তির করেও তোমাকে ভারত থেকে পাকাপাকি ভাবে বের করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য। –উফ, তোমার মাথাটা গেছে। ফোন রেখে দিলাম।’ তসলিমার এই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়৷ নানাবিধ মন্তব্যে ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা৷ সেই সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুর পদ্ম প্রত্যাহার বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে৷
৩৪ বছরের বাম রাজত্বে কাঁটা হয়ে বিঁধে রয়েছে তসলিমা নাসরিনের লেখা ‘দ্বিখণ্ডিত’-কে নিষিদ্ধ করার ঘটনাটি৷ কিন্তু কেন নিষিদ্ধ হল ‘দ্বিখণ্ডিত’? কেন মৌলবাদীদের রক্তচক্ষুর সামনে বাংলা ছাড়তে হল তসলিমাকে? কেন তাঁর পাশে দাঁড়াল না তৎকালীন বাম সরকার? এই প্রশ্ন গুলো আজও জুড়ে রয়েছে বাম জমানার ইতিহাসের সঙ্গে৷ এদিন তসলিমার ফেসবুক পোস্টের নীচে কমেন্টে এক ইউজার লেখেন, ‘ভোটব্যাঙ্ক পলিসির খাতিরে আপনাকে কলকাতা থেকে গুণ্ডা এবং পুলিশ লাগিয়ে চিরতরে তাড়ানোর জন্য ওনার নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত ছিলো বলে উনি মনে করছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সামান্য পদ্মভূষণ দিতে চাইছে। তাই উনি রিফিউজ করছেন। নোবেল প্রাইজ যারা দেয় তাদের সঙ্গে বামপন্থীরা কথা বলে দেখে, কাটমানি দিয়ে ব্যাপারটা সাল্টে নিতে পারে। তাহলে ওনার মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।’
তসলিমার এই পোস্ট পুরনো ক্ষতকে নতুন করে খুঁচিয়ে তুলেছে৷ এই ঘটনা প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একবার বলেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনও বই নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন৷ কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন৷