নিজস্ব প্রতিনিধি: নবান্ন-রাজভবনের সংঘাত কিছুতেই যেন মিটছে না। তবে সেই সংঘাতের মধ্যেও এমন কিছু তথ্য উঠে আসছে যাতে পুরো বিষয়টিকে বেশ গোলমেলে লাগছে। গত শনিবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ইস্যুতে শিলিগুড়িতে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সেই দলে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহুয়া মৈত্র এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বৈঠক শেষে বাইরে বেরিয়ে কল্যাণ দাবি করেছেন, তৃণমূলের দাবির যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল নাকি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এমনকী অভিষেককে আগামী দিনের নেতা হিসেবেও বর্ণনা করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সাক্ষাতের পর তৃণমূলের দাবি, রাজ্যপাল নাকি তাঁদের বলেছেন রাজনৈতিক চাপ থাকলে তাঁর এ বিষয়ে কিছু করার নেই। তৃণমূলের দাবি সত্যি ধরে নিলে রাজ্যপালের বক্তব্যের যে যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেটাই যদি হবে তাহলে রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পরেও রাজভবনের সামনে থেকে ধর্না কর্মসূচি কেন প্রত্যাহার করলেন না অভিষেক? উল্টে দেখা গেল রবিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে কড়া চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি করা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তৃণমূল ধর্না কর্মসূচি চালাচ্ছে, তাতে কে অনুমতি দিয়েছেন, আর যদি অনুমতি ছাড়াই ধর্না মঞ্চ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি তোলার ব্যাপারে কলকাতা পুলিশ আদৌ কোনও পদক্ষেপ করেছে কিনা, এই সমস্ত বিষয় নবান্নকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেলে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন রাজ্যপাল। তাহলে গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহের নির্যাস একটা কথাই বলছে যে, পুরো বিষয়টি নিশ্চিত ভাবে যথেষ্ট গোলমেলে। আর সেই সূত্রেই রাজভবনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে নানা কটাক্ষ করছে কংগ্রেস। এখানেও তাঁরা ‘সেটিং’ তত্ত্ব তুলে ধরতে চাইছেন।
উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে নবান্ন-রাজভবনের বিরোধ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই রাজভবনের সামনে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচি শুরু হয়। যা রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি অনুযায়ী শিলিগুড়িতে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে খুশি হওয়ার কথা অভিষেকের।কিন্তু এরপরেও ধর্না উঠল না।
তবে যা যা ঘটতে দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে কোথাও কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? তাই আপাত দৃষ্টিতে যা ঠিক মনে হচ্ছে তা আসলে ভুল? গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা কী তথাকথিত ‘প্যারাডক্স’-এর বড় উদাহরণ? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাই এর শেষটা কীভাবে হয় সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে রাজনীতি সচেতন মানুষজনের।